নিজস্ব সংবাদদাতা- ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেলের চাকরি হারানো গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই এবার মামলা উঠল কলকাতা হাইকোর্টে। মামলার শুনানিতে বিচারপতি অমৃতা সিনহা এক প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানিয়ে দেন, আপাতত রাজ্য সরকার কাউকে কোনও টাকা দিতে পারবে না। অর্থাৎ, ঘোষিত মাসিক ভাতা স্থগিত। তবে এই মামলার চূড়ান্ত রায় যদি বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের পক্ষে না যায়, তাহলে তা রাজ্যের জন্য রাজনৈতিক চাপও সৃষ্টি করতে পারে।
চাকরি হারানো প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট এপ্রিল মাসে নির্দেশ দেয়, তাঁরা ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী তাঁদের বেতনও পাবেন। কিন্তু গ্রুপ সি ও ডি কর্মীদের জন্য কোনও ছাড় দেয়নি শীর্ষ আদালত। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে রাজ্য সরকার ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল লাইভলিহুড অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি ইন্টারিম স্কিম’-এর অধীনে মাসিক ভাতা ঘোষণা করে। যেখানে গ্রুপ সি কর্মীদের জন্য ২৫ হাজার এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য ২০ হাজার টাকার অনুদানের কথা বলা হয়।
এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেই হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন একদল বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী। তাঁদের যুক্তি, যদি ভাতা দিতেই হয়, তাহলে সেটি কেবল চাকরি হারানোদের জন্য নয়, অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা বা এখনও চাকরি না পাওয়া সকলের জন্যই হওয়া উচিত। এদিন মামলার শুনানিতে তাঁদের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, এই ভাতা কার্যত দুর্নীতির সঙ্গে সমর্থনের সমান। কারণ সুপ্রিম কোর্ট এই কর্মীদের বিষয়ে কোনও রকম ছাড় দেয়নি। শুধুমাত্র শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য অস্থায়ী ছাড় দেওয়া হয়েছে, তাও একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য।
বিচারপতি অমৃতা সিনহা রাজ্যের কাছে জানতে চান, তারা কীভাবে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে এমন সিদ্ধান্ত নিল। মামলাকারীদের যুক্তি অনুযায়ী, হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপন্থী কোনও আইন রাজ্য সরকার করতে পারে না। যদিও এখনও রাজ্যের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি, তবে জানা গিয়েছে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত দুপুর ২টার পর নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন।
এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে কী সিদ্ধান্ত আসবে, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে প্রশাসনিক মহলে। কারণ, এটি কেবল মাত্র ভাতা বিতরণ নয়, বরং ন্যায়বিচার, নীতিনিষ্ঠতা ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার প্রশ্নে পরিণত হয়েছে। রাজ্যের পক্ষের ব্যাখ্যার দিকেই এখন নজর সকলের।
আরও আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন