গত ১৩ বছরে চীনা সরকার গোবি মরুভূমির বিস্তার রোধ করতে গ্রিন ওয়াল বা সবুজ প্রাচীর তৈরিতে বড় সাফল্য অর্জন করেছে। ২০০৯ সাল থেকে ৩০,০০০ হেক্টরের বেশি জমিতে গাছ লাগিয়ে ১২,৯৫,০০০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি মরুভূমি অঞ্চলকে অরণ্যে রূপান্তরিত করেছে দেশটি। এভাবেই চীনের উদ্যোগকে বিশ্বের বৃহত্তম মানুষ-নির্মিত বন হিসেবে অভিহিত করা হয়।
মরুভূমির বিস্তার ও সমস্যার পরিধি
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, গোবি মরুভূমি এখনও দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে। মরুকরণের ফলে চীনের ৩,৬০০ বর্গ কিমি জমি প্রভাবিত হয়েছে। মরুভূমি ঝড়ের প্রভাব শুধু চীনেই নয়, প্রতিবেশী দেশ জাপান, উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়াতেও পড়েছে।
গ্রিন ওয়াল প্রকল্প
চীনের সরকার ১৯৭৮ সালে সবুজ দেওয়াল প্রকল্প চালু করে মরুভূমি বিস্তার রোধের উদ্যোগ নেয়। অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়ার তিনটি মরুভূমির সংযোগকারী বালু নিয়ন্ত্রণ বেল্ট তৈরি করে এটি, যা একটি বৃহৎ সবুজ গ্রেট ওয়াল হিসেবে কাজ করছে। স্থানীয় কৃষক ও সরকারের সহায়তায় ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বীজ ছড়ানো হয় এবং গাছ রোপনের জন্য অর্থ পুরস্কারও প্রদান করা হয়।
সবুজ প্রাচীরের পরিধি ও প্রভাব
চীনা সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এই সবুজ প্রাচীরের দৈর্ঘ্য প্রায় ১,৮৫৬ কিমি, যা মরুভূমির ১৫ শতাংশ বা তার বেশি অংশকে অরণ্যে পরিণত করেছে। আলস্কা লিগ ও অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়ার পশ্চিম অংশ মিলিয়ে তিনটি মরুভূমি মোট ৯৪,৭০০ বর্গ কিমি বিস্তৃত।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীনের গাছপালা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় তা ভূগর্ভস্থ জল শোষণ করে কৃষি ও মানবজীবনে সমস্যা তৈরি করছে। এছাড়াও এই ধরনের গাছপালা ডালপালা কম থাকার কারণে পশু-পাখির জন্য বসবাস উপযুক্ত নয়। ফলস্বরূপ, বনভূমির নিজস্ব বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং দীর্ঘমেয়াদে এই জঙ্গল টিকে থাকার সম্ভাবনা কম।
চীন দীর্ঘমেয়াদে মরুভূমি নিয়ন্ত্রণে সাফল্য পাচ্ছে, তবে বাস্তুতন্ত্র ও পানি ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ এখনো বহাল।