বেঙ্গালুরু, ১৬ মে ২০২৫:অপারেশন সিঁদুরের পর পাকিস্তানকে কড়া জবাব দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ভারত আরেকটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিতে চলেছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের বৈজ্ঞানিক সামর্থ্য এবং কৌশলগত উচ্চতাকে তুলে ধরবে। এবার ভারতের লক্ষ্য—চাঁদের দক্ষিণ মেরু।
গত ১৫ মে, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) ঘোষণা করেছে যে, তারা চন্দ্রযান-৫/লুপএক্স (LUPEX) মিশনের জন্য জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা JAXA-র সঙ্গে তৃতীয় মুখোমুখি প্রযুক্তিগত বৈঠক (TIM-3) সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। বেঙ্গালুরুর ISRO সদর দফতরে ১৩-১৪ মে এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে JAXA, মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ (MHI) এবং ISRO-র উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের মহাকাশ অভিযানে নতুন দিগন্ত
ISRO জানিয়েছে, চন্দ্রযান-৫/লুপএক্স মিশন ভারতের চন্দ্র অভিযানের পঞ্চম অধ্যায়, যা চন্দ্রযান-১, চন্দ্রযান-২, চন্দ্রযান-৩ এবং আসন্ন চন্দ্রযান-৪-এর ধারাবাহিকতায় নির্মিত। এই মিশনের মূল লক্ষ্য—২০৪০ সালের মধ্যে ভারতীয় মহাকাশচারীদের চাঁদে পাঠানো এবং চাঁদের দক্ষিণ মেরুর রহস্য উন্মোচন করা।

চাঁদের দক্ষিণ মেরুর স্থায়ী ছায়াচ্ছন্ন অঞ্চলে (PSR) থাকা জলের অস্তিত্ব ও অন্যান্য উদ্বায়ী পদার্থ বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে এই মিশন পরিচালিত হবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই এলাকাগুলি আজও সূর্যের আলো না পাওয়ার কারণে পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের কাছে এক রহস্যময় অঞ্চল হিসেবে রয়ে গিয়েছে।
উৎক্ষেপণ করবে জাপান, অবতরণ করবে ভারত
LUPEX মিশনে ব্যবহৃত হবে জাপানের H3-24L রকেট। এই উৎক্ষেপণযানে থাকবে ISRO কর্তৃক নির্মিত চন্দ্র ল্যান্ডার এবং মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ নির্মিত চন্দ্র রোভার। এই রোভারই চাঁদের মেরু অঞ্চলে সরাসরি পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ চালাবে।
ISRO জানিয়েছে, এই অভিযানে ব্যবহৃত বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ভারতের পাশাপাশি NASA, ESA এবং JAXA-ও সরবরাহ করবে। সব যন্ত্রই ইন-সিটু (অর্থাৎ ঘটনাস্থলে) বিশ্লেষণের মাধ্যমে চন্দ্রের মেরু অঞ্চলের উৎসারিত পদার্থ চিহ্নিত করবে।
সরকারি অনুমোদন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
চলতি বছরের ১০ মার্চ কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পকে আর্থিক ছাড়পত্র দিয়ে সবুজ সংকেত দেয়। বৈঠকে ISRO-র বৈজ্ঞানিক সচিব এম গণেশ পিল্লাই দুই দেশের মধ্যে যৌথ প্রযুক্তিগত সাফল্যের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতের জন্য এই অংশীদারিত্বের গুরুত্বও তুলে ধরেন।
কূটনৈতিক বার্তা
এই চন্দ্র অভিযান শুধু বৈজ্ঞানিক নয়, কৌশলগত দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের এই অগ্রগতি সরাসরি প্রভাব ফেলবে পাকিস্তান, চিন, তুরস্ক এবং আজারবাইজানের উপর, যারা প্রায়শই ভারতের প্রযুক্তিগত ও কৌশলগত উন্নতির প্রতি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়। LUPEX মিশন সেই সন্দেহের জবাব দেবে বাস্তব কৃতিত্বের মাধ্যমে।
উপসংহার
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটতে চলেছে এই চন্দ্রযান-৫/লুপএক্স মিশনের মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, বৈজ্ঞানিক দক্ষতা এবং কৌশলগত প্রজ্ঞার সংমিশ্রণে ভারত আজ প্রস্তুত ভবিষ্যতের চাঁদ অভিযানকে বাস্তবে রূপ দিতে।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন