বেঙ্গালুরুতে আরসিবি উদযাপন পরিণত হল মৃত্যুকূপে, পদদলনে নিহত ১১, আহত ৪৭

Spread the love


Last upate: 05.05.2025/ 09:36 AM
নিজস্ব সংবাদদাতা- বেঙ্গালুরু: আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (RCB) প্রথম শিরোপা জয়ের আনন্দ উদযাপন Wednesday সন্ধ্যায় পরিণত হল ভয়াবহ ট্র্যাজেডিতে। এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে পদদলনে প্রাণ হারালেন ১১ জন, আহত অন্তত ৪৭ জন। পুলিশ সূত্রে খবর, স্টেডিয়ামের এক কিমির মধ্যে জড়ো হয়েছিলেন প্রায় ৫০,০০০ মানুষ। অনেকেই গেট ভেঙে বা ব্যারিকেড টপকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন।

মৃতদের বেশিরভাগই তরুণ, পুরুষ ও নারী উভয়ই রয়েছেন, অনেকেই ছাত্রছাত্রী বলে জানিয়েছে প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া বলেন, “স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ৩৫,০০০ হলেও এদিন ২ থেকে ৩ লক্ষ মানুষ হাজির ছিলেন। এত ভিড় হবে কেউ কল্পনাও করেনি।” তিনি জানান, ছোট ছোট গেট দিয়ে লোক ঢোকার চেষ্টা করলে গেট ভেঙে পড়ে যায় এবং হুড়োহুড়িতে ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা।

ঘটনার মূল কারণ হিসেবে প্রশাসনের তরফে দায়ী করা হয়েছে দুর্বল সমন্বয় এবং অতিরিক্ত ভিড়কে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, পরিকল্পনার অভাব ও অব্যবস্থাপনাই এই বিপর্যয়ের কারণ। তদন্ত করে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।”

পুলিশ জানিয়েছে, বিকেল তিনটের পর স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় ভিড় এতটাই বেড়ে যায় যে সমস্ত গেট বন্ধ করে দিতে হয়। এর পরেই তিনটি মূল গেট—গেট ৩, গেট ১২ ও গেট ১৮—এ জমে থাকা হাজার হাজার মানুষ গেট ভাঙার চেষ্টা করেন এবং সেখানেই পদদলনের সূত্রপাত। একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক বলেন, “ভিড় ছিল আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছু স্থানে লাঠিচার্জ করতে হয়েছে।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও এবং ছবিগুলিতে দেখা যাচ্ছে, ভক্তরা একে অপরকে ধাক্কা মারছেন, গেট টপকে ঢোকার চেষ্টা করছেন, কেউ কেউ গাড়ি বা গাছে উঠেও অনুষ্ঠান দেখার চেষ্টা করছেন। বহু মানুষ বিনামূল্যে বিতরণ হওয়া পাস পাওয়ার আশায় স্টেডিয়ামের বাইরে জড়ো হন। এদিন সকালে ট্র্যাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোনো প্যারেড হবে না, শুধুমাত্র স্টেডিয়ামের ভিতরেই উদযাপন হবে। কিন্তু বিকেল ৩:১৪ মিনিটে আরসিবির তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানানো হয়, ৫টায় প্যারেড এবং এরপর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠান হবে। সেইসঙ্গে কিছু সীমিত সংখ্যক পাস অনলাইনে ছাড়া হয়। এই বিভ্রান্তিকর তথ্য বহু মানুষকে বিনা পাসে সেখানে আসতে উদ্বুদ্ধ করে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার রাকেশ প্রকাশ জানান, “সকালে বলা হয়েছিল পাস কেনা যাবে, পরে বলা হয় স্টেডিয়ামে গিয়ে নেওয়া যাবে। আমি ছাড়াও হাজার হাজার মানুষ সেই আশাতেই এসেছিলেন।” রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

দুঃখজনক এই ঘটনার সময়সূচি ছিল এমন:

  • দুপুর ২টা: হাজার হাজার ভক্ত জড়ো হতে থাকেন স্টেডিয়ামের বাইরে।
  • দুপুর ৩টা: স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা পূর্ণ হওয়ায় গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
  • দুপুর ৩:৩০: হুড়োহুড়ি ও গেট ভাঙার চেষ্টায় পদদলনের ঘটনা ঘটে।
  • বিকেল ৪:৩০: বিধান সৌধা সংলগ্ন ডঃ আম্বেদকর রোডে জড়ো হন আরও এক লক্ষ মানুষ।
  • বিকেল ৫:৩০: স্টেডিয়ামে পৌঁছায় আরসিবি দল, এর কিছুক্ষণ পরেই ছড়িয়ে পড়ে মৃত্যুর খবর।
  • সন্ধ্যা ৬:৩০: সরকারি সূত্রে প্রথমে ২ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়, পরে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১-এ, আহত অন্তত ৪৭।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রী পরিস্থিতিকে “সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে” বলে স্বীকার করেছেন। বেঙ্গালুরুর ইতিহাসে এটি অন্যতম হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আরও আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্বধারা – সত্যের সন্ধানে, আপনার সাথে


বিশ্বধারা - সত্যের সন্ধানে অবিচল,

আপনার বিশ্বস্ত সঙ্গী। পশ্চিমবঙ্গ ও বাইরের নিরপেক্ষ সংবাদে আমরা নিবেদিত। স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতাই আমাদের মূল ভিত্তি। আমাদের সাথে থাকুন, সঠিক তথ্য জানুন।

This will close in 11 seconds