বিশ্ব দরবারে দুর্দান্ত সাফল্য: রেকর্ড মুনাফায় তৃতীয় ভারতীয় সংস্থা হিসাবে উঠে এল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া

Spread the love

কলকাতা, ২১ মে — দেশের বৃহত্তম এবং কোটি কোটি মানুষের ভরসার ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI) এবার বিশ্বের বাণিজ্যিক মানচিত্রে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেল। সদ্য প্রকাশিত আর্থিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ব্যাঙ্কটি প্রায় ৯.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ₹৭৬,৫০০ কোটি টাকা) নিট মুনাফা অর্জন করেছে, যা প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে এক অভাবনীয় মাইলফলক।

এই রেকর্ড মুনাফার সুবাদে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ভারতের অন্যতম শক্তিশালী সংস্থা রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজONGC-র পরে আয়ের ভিত্তিতে তৃতীয় বৃহত্তম ভারতীয় কোম্পানি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। শুধু তাই নয়, লাভের ভিত্তিতে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ কোম্পানির তালিকায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতেও সফল হয়েছে SBI।


সাফল্যের মূল চাবিকাঠি: YONO SBI

অর্থনৈতিক ও মার্কেটিং বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিরাট সাফল্যের পেছনে রয়েছে ব্যাঙ্কের ডিজিটাল রূপান্তর উদ্যোগ, বিশেষত YONO (You Only Need One) প্ল্যাটফর্ম। বিশিষ্ট মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ রাজেন্দ্র শ্রীবাস্তব স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, “SBI-র লাভের একটা বড় অংশ এসেছে YONO থেকে। যেখানে ব্যাঙ্কের ঐতিহ্যবাহী শাখাগুলি তুলনায় অনেক কম লাভজনক।”

বর্তমানে ব্যাঙ্কের মোট ৫০ কোটিরও বেশি অ্যাকাউন্টের মধ্যে ১৪ শতাংশ-ই YONO-র মাধ্যমে পরিচালিত হয়। যদিও সংখ্যায় এটি কম, তবে লাভের নিরিখে এর অবদান অনস্বীকার্য। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকেই SBI তার সর্বোচ্চ মুনাফার সঞ্চার ঘটাতে পেরেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


শাখা কমানোর সম্ভাবনা?

এই বিপুল ডিজিটাল লাভের প্রেক্ষিতে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, SBI-র কি এতগুলি শাখা ও কর্মচারী বজায় রাখা উচিত? বর্তমানে ব্যাঙ্কটির ২০,০০০ শাখা ও ২.২ লক্ষ কর্মী রয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু বর্তমান সময়ে যেখানে UPI, আধার, স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট প্রযুক্তির দৌলতে গ্রামীণ এলাকাতেও ডিজিটাল লেনদেন বাড়ছে, সেখানে এত শাখা রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় সাশ্রয়ী নয় বলে মনে করছেন অনেকে।

রাজেন্দ্র শ্রীবাস্তবের মতে, “যদি SBI ভবিষ্যতে YONO-র মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে আরও বেশি গুরুত্ব দেয়, তবে তারা সহজেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আরও বড় স্থানে পৌঁছতে পারবে।”


ভবিষ্যতের দিশা: ডিজিটাল রূপান্তরের দিকে আরও জোর

বর্তমানে SBI তার গ্রাহকদের জন্য একটি শক্তিশালী অনলাইন ভিত্তি তৈরি করেছে এবং ভবিষ্যতে যদি আরও উন্নত ডিজিটাল পরিষেবা যেমন — AI চালিত কাস্টমার সাপোর্ট, ইনস্ট্যান্ট লোন অ্যাপ্রুভাল, এবং ইনোভেটিভ ফিনটেক পার্টনারশিপে জোর দেয়, তবে তা ব্যাঙ্কটির আয় বৃদ্ধিতে আরও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, “ভারতে শাখা বাড়ানোর থেকে এখন SBI-র উচিত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলির দিকে নজর দেওয়া এবং প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে গ্রাহক পরিষেবা শক্তিশালী করা।”


উপসংহার

স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া-র এই সাফল্য কেবল একটি কোম্পানির আর্থিক উত্থান নয়, বরং এটি ভারতের ব্যাংকিং খাতের ডিজিটাল রূপান্তরের অন্যতম উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই গতি বজায় রেখে ও YONO-র মতো প্ল্যাটফর্মকে কেন্দ্রে রেখে যদি SBI ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করে, তবে বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংকগুলির তালিকায় শীর্ষে উঠে আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্বধারা – সত্যের সন্ধানে, আপনার সাথে


বিশ্বধারা - সত্যের সন্ধানে অবিচল,

আপনার বিশ্বস্ত সঙ্গী। পশ্চিমবঙ্গ ও বাইরের নিরপেক্ষ সংবাদে আমরা নিবেদিত। স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতাই আমাদের মূল ভিত্তি। আমাদের সাথে থাকুন, সঠিক তথ্য জানুন।

This will close in 11 seconds