নিজস্ব সংবাদদাতা- অবশেষে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কানাড়া ব্যাঙ্ক তাদের গ্রাহকদের জন্য নিয়ে এসেছে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এতদিন ধরে ব্যাঙ্কে সেভিংস অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে হলে গ্রাহকদের নির্দিষ্ট পরিমাণ ন্যূনতম ব্যালেন্স রাখতে হতো। মাস শেষে সেই গড় ব্যালেন্স যদি নির্ধারিত সীমার নিচে চলে যেত, তবে ব্যাঙ্ক সেই গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জরিমানা হিসেবে কেটে নিত। ফলে বহু সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর গ্রাহকদের জন্য এই নিয়মটি ছিল এক বড় বোঝা। কিন্তু এবার সেই পুরনো নিয়ম বাতিল করে কানাড়া ব্যাঙ্ক ঘোষণা করেছে, ২০২৫ সালের ১ জুন থেকে তাদের সমস্ত সেভিংস অ্যাকাউন্টে গড় মাসিক ব্যালেন্স রাখার বাধ্যবাধকতা সম্পূর্ণভাবে তুলে নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার ফলে গ্রাহকদের আর অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রাখার চাপ থাকবে না। এমনকি অ্যাকাউন্ট একেবারে শূন্য থাকলেও তাতে কোনও রকম জরিমানা আরোপ করা যাবে না। ব্যাঙ্ক পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে, এই নীতি পরিবর্তনের ফলে কোনও অ্যাকাউন্ট থেকে আর ন্যূনতম ব্যালেন্স না থাকার কারণে চার্জ কাটা যাবে না এবং এই নিয়মটি সব ধরনের সেভিংস অ্যাকাউন্ট, স্যালারি অ্যাকাউন্ট ও এনআরআই সেভিংস অ্যাকাউন্টের জন্য প্রযোজ্য হবে। এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন সেই সমস্ত মানুষ, যারা স্বল্প আয়ের কারণে মাসের বেশিরভাগ সময়ই তাদের অ্যাকাউন্টে টাকার ঘাটতি অনুভব করেন। শিক্ষার্থী, প্রবীণ নাগরিক, চাকরিজীবী, ছোট ব্যবসায়ী এবং প্রথমবারের মতো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা মানুষদের জন্য এটি এক বিশাল স্বস্তির খবর। কানাড়া ব্যাঙ্ক মনে করছে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আরও বেশি মানুষ ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহী হবেন এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি আরও দ্রুত ঘটবে। ব্যাঙ্কিং পরিষেবা যাতে সবার নাগালের মধ্যে থাকে, সেটাই এই পদক্ষেপের প্রধান উদ্দেশ্য। ইতিমধ্যেই দেশের আর্থিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাদের মতে, এটি শুধুমাত্র সাধারণ গ্রাহকদের স্বস্তি দেওয়ার জন্যই নয়, বরং দেশের আর্থিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করার কৌশল হিসেবেও দেখা উচিত। কারণ ব্যাংকে মানুষ যত বেশি আকৃষ্ট হবে, তত বেশি আর্থিক লেনদেন রেকর্ডে আসবে এবং অর্থনীতির গতি আরও দ্রুত হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং এবং ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের মতো সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পেও এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, সরকারি অনুদান বা ভাতা অনেক মানুষের অ্যাকাউন্টে আসলেও ন্যূনতম ব্যালেন্স না থাকার কারণে অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে যায় বা জরিমানা কেটে নেওয়া হয়। এবার সেই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। এই সিদ্ধান্ত গ্রাহকদের ব্যাংকের উপর আস্থা আরও বাড়াবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এখানেই শেষ নয়। অনেকেই আশা করছেন, কানাড়া ব্যাঙ্কের এই পদক্ষেপ অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিকেও অনুপ্রাণিত করবে এবং তারাও ভবিষ্যতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যদি অন্য ব্যাংকগুলিও একই পথে হাঁটে, তাহলে দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় এক ইতিবাচক বিপ্লব ঘটবে। সরকার ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার বিভিন্ন নীতিমালাও যেখানে ‘ব্যাঙ্ক ফর অল’ বা ‘সবার জন্য ব্যাংকিং’ স্লোগানকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে, সেখানে এই ধরনের পদক্ষেপ সেই লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করবে। এখন দেখার বিষয়, এই নতুন নিয়ম বাস্তবে কতটা প্রভাব ফেলে এবং গ্রাহকদের মধ্যে কতটা ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়। তবে একথা বলাই যায় যে, কানাড়া ব্যাঙ্কের এই পদক্ষেপ লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে এবং ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার প্রতি তাদের আস্থা বাড়াবে। ন্যূনতম ব্যালেন্স না থাকায় আর চিন্তার কোনো কারণ নেই, কারণ কানাড়া ব্যাঙ্ক এবার সত্যিই সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
আরও আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন