চলন্ত বন্দে ভারতে বিপদে পড়া বৃদ্ধ যাত্রীর প্রাণ বাঁচালেন তরুণী চিকিৎসক

Spread the love

নিজস্ব সংবাদদাতা-ট্রেনের শৌচালয়ের সামনে হঠাৎই পড়ে যান এক সত্তরোর্ধ্ব যাত্রী। রক্তচাপ নেমে গিয়েছিল ৯০ বাই ৭০-এ, হার্টের পালস রেট বেড়ে দাঁড়ায় ১১৮-তে, যেখানে স্বাভাবিক হারের কথা ৭২। বারবার বমি করছিলেন তিনি, থরথর করে কাঁপছিলেন, অসংলগ্ন কথা বলছিলেন। পরিবারের মুখে অসহায়তার ছাপ। সেই সময় চলন্ত ট্রেনেই তাঁর প্রাণরক্ষা করে নজির গড়লেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক ঐশ্বর্য রায়।

গত মঙ্গলবার নিউ জলপাইগুড়ি-হাওড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে এই মানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকলেন সহযাত্রীরা। এর আগে হাওড়া-পুরী বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে এক যাত্রী বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ায় রেল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তার ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় এই মানবিক পদক্ষেপ যেন রেলের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও উদ্ধার করে। ঐশ্বর্য রায়ের তৎপরতা দেখে অভিভূত অসুস্থ যাত্রীর পরিবার। জানা গেছে, ঐশ্বর্য রায়ের বাড়ি পুরুলিয়ার রেনি রোড দেবীমালায়। তিনি গত দেড় বছর ধরে আরজিকর মেডিক্যালে কর্মরত। অসুস্থ যাত্রী অমল কুমার, যিনি উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের বাসিন্দা, এখন সম্পূর্ণভাবে স্থিতিশীল।

ঐশ্বর্য রায় লাটাগুড়িতে চিকিৎসকদের একটি কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করে বাবা-মায়ের সঙ্গে ফিরছিলেন। নিউ জলপাইগুড়ি-হাওড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে সি-এইট কামরায় ছিলেন তিনি। বিকাল সাড়ে চারটে নাগাদ ট্রেন ছাড়ার পর মাইকে ঘোষণা হয়, সি-নাইন কামরায় এক যাত্রী গুরুতর অসুস্থ। কোনো চিকিৎসক থাকলে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করা হয়। ঐশ্বর্য সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর ট্রাভেল ব্যাগ থেকে স্টেথোস্কোপ, ব্লাড প্রেশার মেশিন এবং প্রাথমিক ওষুধ বের করে দ্রুত পৌঁছে যান অসুস্থ যাত্রীর কাছে। সেখানে গিয়ে দেখেন, বাথরুমের সামনেই পড়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধ যাত্রী। তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

ঐশ্বর্য রায় জানান, “ওই বৃদ্ধের রক্তচাপ খুবই কমে গিয়েছিল। পালস রেট অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। আমি সঙ্গে যা ওষুধপত্র রেখেছিলাম, তার সাহায্যেই তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিই এবং সেখানেই তাঁর পাশে বসে থাকি।” হাওড়া স্টেশনে পৌঁছানোর কিছু আগে যাত্রী নিজেই উঠে আসনে বসে পড়েন।

ঐশ্বর্য বলেন, “হাওড়ায় ঢোকার মুখে, রাত সাড়ে দশটা নাগাদ, উনি আমার কাছে জানতে চান, তাঁকে কোনো হাসপাতালে যেতে হবে কি না। আমি বলি, একবার ইসিজি করিয়ে নেওয়াই ভালো। উনি তখন হাসছিলেন, আমার হাত ধরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ওই দিনটা আমার জীবনে সবথেকে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আজ যদি অভয়া দিদি বেঁচে থাকতেন, তিনিও নিশ্চয়ই এমনটাই করতেন। আমরা চিকিৎসকরা শপথ নিই—মানুষের পাশে থাকব। এটাই আমাদের সামাজিক দায়িত্ব।”

ঐশ্বর্য রায়ের এই মানবিক আচরণে খুশি রেল কর্তৃপক্ষ, আরপিএফ এবং সহযাত্রীরা। অসুস্থ যাত্রী অমল কুমার ও তাঁর পরিবার দার্জিলিং ঘুরে ফেরার সময় এই ঘটনার মুখোমুখি হন। সকলেই ঐশ্বর্যকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। তাঁর এই কাজ নিঃসন্দেহে চিকিৎসা জগতের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

আরও আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্বধারা – সত্যের সন্ধানে, আপনার সাথে


বিশ্বধারা - সত্যের সন্ধানে অবিচল,

আপনার বিশ্বস্ত সঙ্গী। পশ্চিমবঙ্গ ও বাইরের নিরপেক্ষ সংবাদে আমরা নিবেদিত। স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতাই আমাদের মূল ভিত্তি। আমাদের সাথে থাকুন, সঠিক তথ্য জানুন।

This will close in 11 seconds