কলকাতা, ১৬ মে — ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিসিআই) কি কোনও পেশাদার আবহাওয়াবিদ রয়েছেন? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রিকেটপ্রেমী মহলে। কারণ, প্রায় তিন সপ্তাহ আগে থেকেই বোর্ড জেনে গিয়েছে, ৩ জুন কলকাতায় বৃষ্টি হবে, সঙ্গে ঝড়ও! আর সেই তথাকথিত ‘পূর্বাভাস’এর জোরেই আইপিএল ফাইনাল ইডেন গার্ডেন্স থেকে সরিয়ে অহমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যত নিয়ে ফেলেছে বিসিসিআই, যদিও এখনও তা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি।
আধুনিক উপগ্রহ প্রযুক্তির দৌলতে আবহাওয়া নিয়ে আগাম কিছুটা অনুমান করা গেলেও, আলিপুর আবহাওয়া দফতরের দাবি—সাত দিনের বেশি আগের নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় ‘ইন্ডিয়া মেটিওরোলজিকাল ডিপার্টমেন্ট’ও ছ’দিনের বেশি আগাম তথ্য দেয় না। তবুও বিসিসিআই ৩ জুনের জন্য ৬৫ শতাংশ বৃষ্টির সম্ভাবনার ‘খবর’ পেয়েছে, তাও আবার একটি মার্কিন বেসরকারি আবহাওয়া অ্যাপ থেকে! সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করেই কলকাতা থেকে আইপিএল ফাইনাল সরানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে বোর্ড।
ইডেনে কেন ছিল ফাইনাল?
চলতি আইপিএলের প্রাথমিক সূচি অনুযায়ী, ২৩ মে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ও ২৫ মে ফাইনাল ইডেনে হওয়ার কথা ছিল। কারণ, গত বছরের চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্স। রীতি অনুযায়ী, ফাইনাল ও উদ্বোধনী ম্যাচ চ্যাম্পিয়নের হোম গ্রাউন্ডে হয়। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনার কারণে আইপিএল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকায় নতুন সূচি প্রকাশ করে বোর্ড।
১৩ মে-র ঘোষণায় জানানো হয়, প্লে-অফ ও ফাইনাল-সহ বাকি ১৭টি ম্যাচ হবে ছয়টি শহরে— বেঙ্গালুরু, মুম্বই, দিল্লি, লখনউ, জয়পুর ও অহমদাবাদে। কলকাতার নাম ছিল না। সঙ্গে বলা হয়েছিল, ফাইনাল ও প্লে-অফের মাঠ পরে জানানো হবে। সিএবি’র এক কর্তার মতে, ‘‘এটা এক ধরনের চালাকি। আগেই পরিকল্পনা ছিল ইডেন বাদ দেওয়ার।’’

রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি: মোদী বনাম দিদি?
অনেকের মতে, আইপিএল ফাইনাল সরানোর নেপথ্যে রয়েছে তীব্র রাজনৈতিক টানাপোড়েন। কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের সম্পর্ক যে তাপমাত্রায় আছে, তাতে সুযোগ পেলেই কলকাতাকে ‘ছেঁটে’ দেওয়া হচ্ছে। মোদী-অমিত শাহের গড় অহমদাবাদে ফাইনাল আয়োজন সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। অনেকের মতে, এখানে আবহাওয়ার চেয়ে রাজনীতির প্রভাব অনেক বেশি।
আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের প্রধান জয় শাহ, যিনি অমিত শাহের পুত্র, তিনিও এই সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছেন বলে অনেকে মনে করছেন। প্রশ্ন উঠছে— যদি ইডেনে বৃষ্টির আশঙ্কাই বড় কারণ হয়, তবে ফাইনাল মুম্বইতে না করে অহমদাবাদেই কেন? মুম্বইতে বোর্ডের সদর দফতর, ওয়াংখেড়েতে আইপিএল ও বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসও রয়েছে।
নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের ‘চাহিদা’
এশিয়ার বৃহত্তম স্টেডিয়াম হিসেবে অহমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের মান রাখতে গেলে বড় ম্যাচ আয়োজন জরুরি। স্টেডিয়াম খালি পড়ে থাকলে সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে। তাই এমন সিদ্ধান্ত? সেই যুক্তিতেই আইপিএলের ফাইনাল সেখানে সরিয়ে আনা হচ্ছে বলে ধারণা। ২০২২ ও ২০২৩ সালের আইপিএল ফাইনালও এই মাঠেই হয়েছিল। তবে সেবারে ‘প্রথা’ ভাঙা হয়নি। এবারের সিদ্ধান্ত নিয়ে তাই প্রশ্ন আরও জোরালো।
শেষ কথা
আইপিএল শুধু ক্রিকেট নয়, এটা রাজনীতির, অর্থনীতির এবং ক্ষমতার এক বিশাল লড়াইও বটে। ৩ জুনের আবহাওয়া সত্যিই কেমন হবে তা সময় বলবে। কিন্তু আজ যা স্পষ্ট— ঝড়-বৃষ্টির থেকেও বড় প্রভাব ফেলেছে ‘রাজনীতির হাওয়া’। কলকাতা কি শেষ পর্যন্ত ফাইনাল পাবে? নাকি ‘ম্যাচ’ ইতিমধ্যেই অন্য মাঠে খেলা হয়ে গিয়েছে?
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন