নিজস্ব সংবাদদাতা-বাংলা সহ গোটা দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলা ডিজিটাল অ্যারেস্ট প্রতারণা মামলায় আজ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এই মামলায় চার্জশিট জমা দিল কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতের ইডি-র বিশেষ কোর্টে।
এদিন ৬০ পাতার বিশদ চার্জশিটে চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেছে ইডি। তদন্তে উঠে এসেছে, শুধুমাত্র ভয় দেখিয়ে এবং প্রতারণার মাধ্যমে চক্রটি প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চার্জশিটে মূলত চিরাগ কাপুর ও যোগেশ দুয়ার নামক দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যাঁরা এই জালিয়াতি চক্রের মূল চক্রী বলে দাবি ইডির।
দুবাই থেকে চলত প্রতারণার ফাঁদ
ইডি জানিয়েছে, চক্রটি মূলত দুবাই থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হত। অভিযুক্তদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একটি সংস্থাও, যার নামও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্তে এখন পর্যন্ত তাদের ৩০০-রও বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করা গেছে, যেখানে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়েছে।
এছাড়া, ইতিমধ্যেই ইডি ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে, যা চক্রের আর্থিক ক্ষমতা এবং প্রতারণার পরিমাণ সম্পর্কে পরিষ্কার ইঙ্গিত দেয়।
৩৫০টি সিম, আন্তর্জাতিক রোমিং ব্যবহার করে ভয় দেখানো হতো
চার্জশিট অনুযায়ী, এই জালিয়াত চক্রটি মোট ৩৫০টি মোবাইল সিম কার্ড ব্যবহার করত, যার অনেকগুলোতেই ছিল আন্তর্জাতিক রোমিং। এইসব নম্বর থেকেই সাধারণ মানুষদের ফোন করে নিজেদের ভুয়ো পুলিশ অফিসার বা কাস্টমস অফিসার পরিচয় দেওয়া হত।
প্রতারণার কৌশল: ভয় দেখিয়ে ওটিপি আদায়
প্রথমে বলা হতো যে, কোনও পার্সেলে অবৈধ সামগ্রী ধরা পড়েছে, বা আপনার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তারপর ভিডিও কলের মাধ্যমে ভয় দেখানো হতো — কখনও পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তি, কখনও থানা বা আদালতের ভুয়ো ব্যাকড্রপ।
ভয় পেয়ে ভেঙে পড়লে, ‘মিটমাট’ করার নাম করে চাওয়া হতো ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড নম্বর, ওটিপি, ব্যাঙ্কের ইউজার আইডি ইত্যাদি। একবার এইসব তথ্য পেয়ে গেলে, মাত্র কয়েক মিনিটে সাফ করে দেওয়া হতো পুরো অ্যাকাউন্ট।
চার্জশিটে নাম ১৩ জনের
ইডি জানিয়েছে, এই মামলায় মোট ১৩ জন অভিযুক্তের নাম চার্জশিটে রয়েছে। তবে তদন্ত এখনও চলমান। ভবিষ্যতে আরও ব্যক্তির নাম যুক্ত হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন আধিকারিকরা।
ঘটনাটির গুরুত্ব কেন?
ডিজিটাল যুগে সাধারণ মানুষ যেখানে মোবাইল ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের উপর নির্ভরশীল, সেখানে এই প্রতারণা কাণ্ড চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় কীভাবে ‘সাইবার ক্রাইম’-এর পরিধি ও ধরণ দিনে দিনে বাড়ছে। এই চক্র যে শুধু বাংলা নয়, দেশজুড়ে সক্রিয় ছিল, তা ইডি-র তদন্তেই স্পষ্ট হয়েছে।
সতর্ক থাকুন! কী করবেন এই ধরনের ফোন এলে?
- অপরিচিত নম্বর থেকে ভিডিও কল এলে সতর্ক থাকুন
- নিজের ব্যাঙ্কিং তথ্য কাউকে জানান না
- সরকারি অফিসার পরিচয় দিলেই বিশ্বাস করবেন না
- প্রয়োজনে স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানান
আরও আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন