কলকাতা, ১২ মে ২০২৫:২৬ হাজারের বেশি শিক্ষক চাকরি বাতিলের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, আগামী ৩১ মে-র মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা রাজ্যকে জানিয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সেই নির্দেশ মেনেই নির্ধারিত সময়ের আগেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির খসড়া প্রস্তুত করে ফেলেছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর।
শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, খসড়াটি ইতিমধ্যেই নবান্নে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। নবান্নের সবুজ সংকেত পেলেই স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। যদিও এখনও পর্যন্ত জেলাভিত্তিক বিষয় ও সংরক্ষণভিত্তিক শূন্য পদের তালিকা শিক্ষা দফতরের হাতে আসেনি। এই তালিকা তৈরির দায়িত্বে রয়েছেন জেলার স্কুল পরিদর্শকরা। তাঁদের রিপোর্ট এলেই চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে এগোবে কমিশন।

চাকরি বাতিল হওয়া অনেক প্রার্থী এবং বর্তমান শিক্ষক সমাজ এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে আশাবাদী হলেও, কিছুটা সংশয়ও থেকে যাচ্ছে। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্যকে হলফনামা দিতে হবে যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। যদি রায় পুনর্বিবেচনার প্রেক্ষিতে ইতিবাচক কিছু হয়, তবে তা সুসংবাদ হবে। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হলে জুন মাস থেকে বেতন বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।”
অন্যদিকে, চাকরিহারাদের একাংশ স্পষ্ট জানিয়েছেন, রিভিউ পিটিশনের চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত তাঁরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরীক্ষায় বসবেন না। তাঁদের দাবি, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে রাজ্য সরকারকে। এরই মধ্যে ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর পক্ষ থেকে আগামী ১৫ মে শিক্ষা দফতর ঘেরাওয়ের ডাক দেওয়া হয়েছে।
এসএসসি-র দফতর বর্তমানে আন্দোলনরত চাকরিহারাদের ঘেরাওয়ের মধ্যে রয়েছে। ফলে স্বাভাবিক প্রশাসনিক কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে। চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার নিজের অফিসে না গিয়ে বিকাশ ভবনে বসে কাজ করছেন। শিক্ষা দফতরের দাবি, এই পরিস্থিতিতে SSC-র স্বাভাবিক কার্যপ্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ২০১৬ সালের SSC প্যানেলকে সম্পূর্ণ বাতিল করে দেয় দুর্নীতির অভিযোগে। সেই রায়ে ২৫,৭৩৫ জনের চাকরি বাতিল হয় এবং তাঁদের বেতন ফেরতের নির্দেশ দেয় আদালত। পরবর্তীতে রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আবেদনে আংশিক ছাড় দিয়ে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ‘অযোগ্য নন’ শিক্ষকদের চাকরি ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বহাল রাখার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত।
এই পরিস্থিতিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করা এবং সময়সীমা রক্ষা করে তা সম্পন্ন করা রাজ্য সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও শিক্ষা দফতরের সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে যে চলতি মাসের মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সম্ভাবনা প্রবল। তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন রাজ্যের হাজার হাজার চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষাকর্মীরা।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন