প্রতারণার অভিযোগ, খালি অফিস, বন্ধ ফোন: নিখোঁজ ‘গালফ ফার্স্ট কমার্শিয়াল ব্রোকারস’
কলকাতা, ২২ মে:
Dubai Firm:এক আন্তর্জাতিক ব্রোকারেজ ফার্ম একরাতের মধ্যে হাওয়া হয়ে যাওয়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দুবাই এবং ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। “গালফ ফার্স্ট কমার্শিয়াল ব্রোকারস” নামক একটি সংস্থা, যা দুবাইয়ের বিজনেস বে-র ক্যাপিটাল গোল্ডেন টাওয়ারে দুটি অফিস স্পেস থেকে পরিচালিত হত, হঠাৎই উধাও হয়ে গেছে। কয়েক লক্ষ কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে এই সংস্থার বিরুদ্ধে।
সংস্থার প্রতারণার শিকার এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, “আমরা এই সংস্থার সমস্ত নম্বরে ফোন করেছিলাম, কিন্তু কেউ ধরেনি। উত্তর চাইতে আমরা অফিসে এসেছি, কিন্তু এখানে সমস্ত অফিস খালি। মনে হচ্ছে এখানে কোনও অফিসই ছিল না আদপে।”

প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, সংস্থাটি বিনিয়োগের নামে লোকজনকে প্রলোভন দেখাত এবং ৪০ জন কর্মী নিয়মিত ফোন করে ফরেক্স ট্রেডিংয়ের লোভ দেখিয়ে টাকা আদায় করত। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে তাঁদের নিজস্ব মাতৃভাষায় কথা বলে বিশ্বাস অর্জন করত সংস্থার কর্মীরা।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা
কেরালার দুই প্রবাসী, মহম্মদ ও ফয়াজ পোয়েল, সংস্থাটিতে মোট ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার (ভারতীয় মূল্যে প্রায় ₹৬২.৬ লক্ষ) বিনিয়োগ করেছিলেন। অপরদিকে কর্ণাটকের একজন বিনিয়োগকারী জানিয়েছেন, তিনি প্রায় ₹২ কোটি বিনিয়োগ করেন, যার বড় অংশ এসেছিল তাঁর স্ত্রীর সঞ্চয় এবং ক্রেডিট কার্ড থেকে তোলা ঋণ থেকে।
তিনি বলেন, “প্রথমে কিছু রিটার্ন পাওয়ায় বিশ্বাস তৈরি হয়। এরপর তারা টাকা তোলার পথ বন্ধ করে দেয় এবং আরও বেশি বিনিয়োগের চাপ দিতে থাকে।” ওই বিনিয়োগকারী জানান, একজন কন্নড়ভাষী রিলেশনশিপ ম্যানেজার তাঁকে “সুনিশ্চিত রিটার্ন”-এর আশ্বাস দিয়েছিলেন।
অবৈধ প্ল্যাটফর্ম ও ভুয়ো অফিসের অভিযোগ
জানা গিয়েছে, এই সংস্থা ‘সিগমা ওয়ান ক্যাপিটাল’ নামের একটি অনলাইন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করত, যা আদতে বৈধ নয়। সংস্থার দাবি ছিল, তারা ক্যারিবিয়ান দ্বীপ সেন্ট লুসিয়াতে রেজিস্টার্ড এবং মাসালা টাওয়ারে তাদের অফিস রয়েছে। কিন্তু তদন্তে দেখা গিয়েছে, সেখানে কোনও অফিসের অস্তিত্ব নেই।
তদন্তের দাবি, মামলা দায়ের
এই প্রতারণার ঘটনায় দুবাই ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস অথরিটি এবং কমোডিটিজ অথরিটির কাছে ইতিমধ্যেই একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে এত বড় মাপের একটি প্রতারণা এতদিন প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে চলল?
এই ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এরকম আরও সংস্থা হয়তো একই কৌশলে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের প্রতি সতর্ক থাকার বার্তা দিচ্ছে প্রশাসন, যাতে তাঁরা বৈধ লাইসেন্সপ্রাপ্ত সংস্থার বাইরেও কোনও রকম প্রলোভনে পা না দেন।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন