কলকাতা, ৩১ মে ২০২৫:
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার করুণ চিত্র উঠে এল কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক রিপোর্টে। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সরকারি বিদ্যালয়গুলির অবস্থা বেহাল, যার জেরে প্রতিনিয়ত কমছে সরকারি স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা এবং বাড়ছে বেসরকারি স্কুলমুখী প্রবণতা। এই চিত্রকে ‘বিব্রতকর’ আখ্যা দিয়ে তিনটি রাজ্য – অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও উত্তরাখণ্ড-এর উপর বিশেষভাবে নজর দিয়েছে কেন্দ্র।
রিপোর্ট বলছে কী?
- অন্ধ্রপ্রদেশে মোট ৪৫ হাজার সরকারি স্কুল থাকলেও পড়ুয়ার সংখ্যা মাত্র ৪৬%, অথচ ১৫ হাজার বেসরকারি স্কুলেই পড়ছে ৫২% ছাত্র।
- তেলেঙ্গানায় ৭০% স্কুল সরকারি হলেও ৬২% পড়ুয়া বেছে নিচ্ছে বেসরকারি স্কুল।
- উত্তরাখণ্ডেও একই চিত্র। সরকারি স্কুলের সংখ্যা বেশি হলেও ছাত্রছাত্রীদের বেশিরভাগ বেসরকারি স্কুলে ভরতি হচ্ছে।
এই প্রবণতা শুধু তিনটি রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—দেশের প্রায় সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেই সরকারি স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীদের সরে যাওয়ার প্রবণতা স্পষ্ট।
কেন্দ্রের সতর্কবার্তা রাজ্যগুলিকে
শুধু পরিসংখ্যান প্রকাশ করেই থেমে থাকেনি কেন্দ্র। সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে সতর্ক করে চিঠি পাঠানো হয়েছে, যেখানে জানানো হয়েছে, “সরকারি শিক্ষায় আস্থা হারাচ্ছে অভিভাবকরা, যা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যতের পক্ষে চিন্তার।”
মিড ডে মিল রিপোর্টেও বিপদ সংকেত
মিড ডে মিল সংক্রান্ত সমীক্ষাতেও উঠে এসেছে একই ছবি— সরকারি স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমনকি যেসব বিদ্যালয়ে খাবার ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানেও উপস্থিতি কম।

কেন পড়ছে সরকারি বিদ্যালয়ের মান?
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, কয়েকটি মূল সমস্যা:
- শিক্ষক সংকট
- পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভাব
- বিদ্যমান পরিকাঠামোর সঠিক ব্যবহার না হওয়া
- আধুনিক প্রযুক্তির অনুপস্থিতি
- প্রশাসনিক নজরদারির ঘাটতি
এই সমস্যাগুলি সরকারি শিক্ষায় আস্থার ঘাটতির মূল কারণ, যার ফলে অভিভাবকরা বাধ্য হচ্ছেন অধিক খরচ সত্ত্বেও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে।
সমাধানের উপায় কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি বদলাতে হলে:
- সরকারি স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়ন
- পর্যাপ্ত যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ
- পড়াশোনার মানোন্নয়ন
- ডিজিটাল শিক্ষার প্রসার
- স্থানীয় স্তরে অভিভাবক-শিক্ষক-প্রশাসনের সমন্বয়
এই সমস্ত দিকেই গুরুত্ব দিতে হবে।
শেষ কথা:
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা শুধুই পরিসংখ্যান নয়, এটি ভবিষ্যতের ভিত। যদি সরকারি স্কুলগুলির প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা না যায়, তাহলে শিক্ষার বেসরকারিকরণ এক ভয়াবহ বাস্তবতায় রূপ নেবে—যার খেসারত দিতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে।
আরও আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন