ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি: প্রতিশ্রুতি বনাম বাস্তবতা

Spread the love

১১ মে ২০২৫,কলকাতা:ভারত ও পাকিস্তান শনিবার একে অপরের বিরুদ্ধে সব ধরনের সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে। এই সমঝোতার মাধ্যমে পশ্চিম সীমান্তে চার দিন ধরে চলা ভয়াবহ যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটেছে। তবে যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিস্ফোরণ ও ড্রোন দেখা যাওয়ার ঘটনায় ইসলামাবাদের প্রতিশ্রুতির প্রতি সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

এই সংঘর্ষটি দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর বলে মনে করা হচ্ছে এবং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার কিছুক্ষণ আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি আকস্মিক পোস্ট দেন। এর কয়েক মিনিট পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি যুদ্ধবিরতির কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন।

তবে রাত ১১টায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মিস্রি নিশ্চিত করেন যে, পাকিস্তান সন্ধ্যার মধ্যেই একাধিকবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে এবং ভারতের সশস্ত্র বাহিনী উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত জবাব দিয়েছে। পাঞ্জাব, গুজরাট, রাজস্থান এবং জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় ড্রোন দেখার খবর পাওয়া গেছে, যদিও সব রিপোর্ট নিশ্চিত নয়।

যদিও আগের তুলনায় আক্রমণের তীব্রতা কম ছিল এবং ভারত কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পাল্টা আঘাত হানেনি, তবুও এই লঙ্ঘন সমঝোতার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা এই সমঝোতায় নিজেদের মধ্যস্থতার অবদান দাবি করলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এটি সরাসরি দুই দেশের আলোচনার মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে।

মিস্রি জানান, শনিবার ভারতীয় সময় দুপুর ১:৩৫-এ পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস (DGMO) ভারতের DGMO-কে ফোন করে আলোচনা করেন। দুই পক্ষ ভারতীয় সময় বিকেল ৫টা থেকে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে সব ধরনের গুলিবর্ষণ বন্ধ করতে একমত হন। পরবর্তী বার্তা বিনিময় ১২ মে রাত ১২টায় হওয়ার কথা।

চার দিনের যুদ্ধটি শুরু হয় ৭ মে রাত ১:০৪ মিনিটে, পহেলগাম হামলার প্রতিশোধে চালানো অপারেশন ‘সিন্দুর’-এর মাধ্যমে। এতে ভারত পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে আঘাত হানে, যার ফলে ২৬ জন নিহত হন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, ভারত সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার দৃঢ় ও আপোষহীন অবস্থান বজায় রাখবে। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন এই সমঝোতা তাদের মধ্যস্থতার ফল, ভারত সরকার এই দাবিকে খাটো করে দেখিয়েছে এবং দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং উপ-রাষ্ট্রপতি জেডি ভ্যান্স দাবি করেছেন তারা উভয় দেশের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা এনেছেন এবং ভবিষ্যতে একটি নিরপেক্ষ স্থানে আলোচনা হতে পারে। তবে ভারত এই সম্ভাবনা নাকচ করেছে।

ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর তিনটি শাখার মুখপাত্ররা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তারা আরও জানান, পাকিস্তানের সামরিক অবকাঠামোতে নির্ভুল হামলার মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, বিশেষ করে স্কারদু, সারগোধা, এবং শিয়ালকোটে।

এই সমঝোতা কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই কার্যকর হয়েছে এবং পহেলগাম হামলার পর গৃহীত ভারতের কঠোর পদক্ষেপ যেমন সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত, আটারিতে সীমান্ত বন্ধ, কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস, এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের বহিষ্কার বহাল থাকবে।

সার্বিকভাবে, যুদ্ধবিরতি আপাতত উত্তেজনা কমালেও, পাকিস্তানের কর্মকাণ্ড এবং আন্তর্জাতিক ভূমিকাকে ঘিরে সন্দেহ-সংশয় থেকে যাচ্ছে। ভারতের অবস্থান পরিষ্কার—সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় কোনো আপোষ নয় এবং প্রতিটি চ্যালেঞ্জের শক্তিশালী জবাব দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্বধারা – সত্যের সন্ধানে, আপনার সাথে


বিশ্বধারা - সত্যের সন্ধানে অবিচল,

আপনার বিশ্বস্ত সঙ্গী। পশ্চিমবঙ্গ ও বাইরের নিরপেক্ষ সংবাদে আমরা নিবেদিত। স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতাই আমাদের মূল ভিত্তি। আমাদের সাথে থাকুন, সঠিক তথ্য জানুন।

This will close in 11 seconds