ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের আবহেই প্রথমবারের জন্য দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে আলোচনায় বসলো ভারত ও আমেরিকা।
নয়াদিল্লি,২০ মে
ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতির ইঙ্গিত মিলছে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল সম্প্রতি আমেরিকার বাণিজ্যসচিব হোয়ার্ড লুটনিকের সঙ্গে এক বৈঠকের পরে সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি পোস্ট করে জানান, “প্রথম দফার বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।”
এই পোস্টেই কিছুটা স্পষ্ট হয়েছে, বিগত কয়েক দিন ধরে যেসব প্রশ্ন উঠছিল – যেমন ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতি নিয়ে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য কি বাণিজ্য আলোচনায় প্রভাব ফেলবে কিনা – তার কিছুটা জবাব মিলেছে।
ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্য
সম্প্রতি ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ভারত থেকে ‘নিঃশুল্ক বাণিজ্যচুক্তি’র প্রস্তাব পেয়েছিল আমেরিকা। এমনকি অ্যাপলের সিইও টিম কুককে ভারতে উৎপাদন বন্ধের প্রস্তাবও দিয়েছেন বলে জানান তিনি। এই মন্তব্যে কিছুটা কূটনৈতিক চাপের সম্ভাবনা তৈরি হলেও, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর স্পষ্ট ভাষায় জানান, আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে এবং কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
জয়শঙ্কর বলেন, “যে কোনও বাণিজ্যচুক্তি পারস্পরিকভাবে লাভজনক হতে হবে। এটি উভয় দেশের জন্যই ফলপ্রসূ হওয়া উচিত। এটিই আমাদের লক্ষ্য।”

চলমান আলোচনা এবং ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
গত ১৭ মে থেকে ওয়াশিংটনে শুরু হয়েছে ভারত-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে চার দিনের এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। এর আগে, গত কয়েক মাসে উভয় দেশের প্রতিনিধিরা একাধিকবার পরস্পরের দেশে সফর করেছেন এই আলোচনার লক্ষ্যে।
বৈঠকে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও দুই পক্ষই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ‘ব্লুমবার্গ’-এর একটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, চুক্তির খসড়ায় তিনটি মূল ভাগ থাকতে পারে। সম্ভবত জুলাই মাসের মধ্যেই এই আলোচনা একটি প্রাথমিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে বলে সূত্রের দাবি।
পীযূষ গোয়েলের বার্তা
সোমবার রাতে (ভারতীয় সময় অনুযায়ী), পীযূষ গোয়েল তাঁর সামাজিক মাধ্যমে হোয়ার্ড লুটনিকের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল একটি ছবি পোস্ট করে জানান, আলোচনায় আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি হয়েছে। যদিও তিনি আলোচনার নির্দিষ্ট বিষয়ের উল্লেখ করেননি, তবে তাঁর পোস্টের ভাষা থেকে বোঝা যাচ্ছে, আলোচনার পরিবেশ ছিল যথেষ্ট সদর্থক।
বিশ্লেষণ: বাণিজ্য নাকি কূটনীতি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা যতই এগোক, তা নির্ভর করছে উভয় দেশের পারস্পরিক বিশ্বাস এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপর। ট্রাম্পের মন্তব্য কিছুটা জল ঘোলা করলেও, কূটনৈতিক স্তরে তা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না বলেই অভিমত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
উপসংহার:
ভারত-আমেরিকার মধ্যে এই বাণিজ্য আলোচনা শুধু অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। জুলাই মাসের মধ্যে যদি কোনও প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তাহলে তা ভবিষ্যতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন দিক খুলে দিতে পারে।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন