কলকাতা | ১৯ মে, ২০২৫
ভারতের গোপন তথ্য পাচারচক্রে এক নতুন মোড়—গ্রেপ্তার হলেন পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তির অভিযুক্ত লাস্যময়ী ট্র্যাভেল ভ্লগার জ্যোতিরানি মালহোত্রা। আর সেই গ্রেপ্তারের পর থেকেই নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে—এইবার কি পাক মদতে নিশানায় রয়েছে ভারতের তীর্থস্থানগুলি? বিশেষ করে পুরীর শ্রীজগন্নাথ মন্দির ও কলকাতার মতো গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল এলাকা?
জানা যাচ্ছে, ধৃত জ্যোতি গত সেপ্টেম্বর মাসে পুরী গিয়েছিলেন। সেখানে শুধুই ঘোরাঘুরি নয়, ইউটিউবের জন্য ভিডিও বানানোর ছলে মন্দির চত্বরের বিভিন্ন দিকের, এমনকি গর্ভগৃহের দিকের ছবিও সংগ্রহ করেছিলেন। প্রথম ভিডিওতে বিস্তারিতভাবে দেখিয়েছেন কীভাবে মন্দিরে প্রবেশ করতে হয়, লাইনের বিন্যাস, কোথায় পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা অবস্থান করেন ইত্যাদি—যা গোয়েন্দাদের মতে অত্যন্ত স্পর্শকাতর তথ্য।

শুধু পুরী নয়, তদন্তকারীদের সন্দেহের তালিকায় রয়েছে কলকাতাও। ফেব্রুয়ারি মাসে জ্যোতি শিয়ালদহ হয়ে বারাকপুর-শেওড়াফুলি সফরে গিয়েছিলেন স্থানীয় এক ইউটিউবারের সঙ্গে। সেই ভিডিওতেও শিয়ালদহ স্টেশনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টকে ঘনিষ্ঠভাবে তুলে ধরা হয়। গোয়েন্দাদের প্রশ্ন—শুধুই কি ভ্লগিং? নাকি বারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট বা জেটিঘাট সংলগ্ন এলাকায় কোনও তথ্য সংগ্রহের কাজ করছিল সে?
গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গেছে, পুরীতে থাকার সময় জ্যোতি যোগাযোগ করেছিলেন ওড়িশার এক মহিলা ইউটিউবারের সঙ্গে, যিনি সম্প্রতি পাকিস্তানের কর্তারপুর সাহিব গিয়েছিলেন। সেই যোগসূত্র নিয়েও সন্দেহ প্রবল। যদিও সংশ্লিষ্ট ইউটিউবার ও তাঁর পরিবার দাবি করেছেন, সফরের উদ্দেশ্য ছিল নিছক তীর্থদর্শন।
তদন্তে উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য—জ্যোতির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থান ঘুরে, ভিডিও তুলে পাকিস্তানে পাঠাচ্ছিলেন। তাকে এই কাজে মদত দিচ্ছিলেন ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের এক প্রাক্তন দূতাবাস কর্মী। গত একবছরে তিনি যেসব জায়গায় ঘুরেছেন, তার প্রতিটি এখন তদন্তের আওতায়।
পুরী পুলিশ ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে গভীর অনুসন্ধান শুরু করেছে। পুরী পুলিশের সুপার বিনীত আগরওয়াল জানিয়েছেন, “জ্যোতি মন্দির এলাকায় কোথায় ছিলেন, কাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনও সম্ভাবনাকেই উড়িয়ে দিচ্ছি না।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, তীর্থস্থানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের ভিড় হয়। ফলে এমন জায়গায় হামলা হলে তার প্রভাব পহেলগাঁও বা অন্যান্য জায়গার তুলনায় অনেক বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। তাই তদন্তকারীরা নিশ্চিত হতে চাইছেন, জ্যোতির ভিডিও ও ভ্লগিংয়ের আড়ালে কোনও গুপ্তচর কার্যকলাপ চালানো হয়েছিল কি না।
বর্তমানে জ্যোতির ইউটিউব চ্যানেলের সব ভিডিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে তাঁর সহযোগীদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় শুধু পুরী নয়, অন্যান্য তীর্থস্থান এবং বড় শহরগুলির নিরাপত্তা আরও জোরদার করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর।
সতর্ক বার্তা: অনলাইনে যে কোনও ভিডিও বা কনটেন্টের আড়ালে যে বিপজ্জনক উদ্দেশ্য লুকিয়ে থাকতে পারে, এই ঘটনা তার বড় প্রমাণ। সময় এসেছে, সরকার এবং সাধারণ মানুষ—উভয়কেই আরও সতর্ক হওয়ার।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন