নিজস্ব সংবাদদাতা- উত্তর-পূর্ব ভারতে টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা ও ভূমিধস মারাত্মক রূপ নিয়েছে। সোমবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ জনে এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫.৫ লক্ষ। এর মধ্যে সবচেয়ে বিপর্যস্ত রাজ্য হলো অসম, যেখানে মৃতের সংখ্যা ১১ ও ২২টি জেলার ৫.৩৫ লক্ষাধিক মানুষ এই দুর্যোগে আক্রান্ত।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই দুর্দিনে সমস্ত রাজ্যের বিজেপি ইউনিট ও কর্মীদের সহায়তা করতে বলেন দলের সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জে.পি. নাড্ডা। অন্যদিকে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে কেন্দ্রীয় সরকারকে সমালোচনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেন “PM CARES Fund” খুলে দেন, যেখানে কোটি কোটি টাকা অডিটবিহীন পড়ে আছে।
অসম: ভয়াবহ পরিস্থিতি
অসমে ১৫টি নদী বিপদসীমার উপরে বইছে। লখিমপুর, অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত জেলা, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সফর করে পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। সড়ক, রেল, ফেরি পরিষেবা অনেক জায়গায় বিপর্যস্ত।
সোমবার গুয়াহাটিতে মুখ্যমন্ত্রী শর্মা ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা বৈঠক করেন। আলোচনায় উঠে আসে:
- অসম-মেঘালয় সীমান্ত সমস্যা
- যৌথ বিদ্যুৎ ও সেচ প্রকল্প
- গুয়াহাটির জলাবদ্ধতা নিরসন
উভয় রাজ্য NESAC (North Eastern Space Application Centre) এর মাধ্যমে স্যাটেলাইট-ভিত্তিক জলপ্রবাহ ও পরিবেশগত গবেষণা শুরু করবে।
সিকিম: ভূমিধসে সেনা নিহত
রবিবার সন্ধ্যায় মাংগান জেলার ছাতেনে একটি সেনা ক্যাম্পে ভূমিধসে ৩ সেনা কর্মী নিহত হন এবং ৯ জন নিখোঁজ। BRO (Project Swastik) দুর্গম রাস্তায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।
সিকিমের পর্যটনস্থলগুলিতে যাতায়াত প্রায় বন্ধ। ১,৬৭৮ জন পর্যটক উদ্ধার হলেও ১০০+ মানুষ এখনো আটকে রয়েছেন। টানা বৃষ্টিতে তিস্তা নদী ৪০ ফুট পর্যন্ত ফুলে ওঠে।
মণিপুর: বিপর্যস্ত ইম্ফল
টানা চারদিনের ভারী বৃষ্টিতে ১৯ হাজারের বেশি মানুষ গৃহচ্যুত হয়েছেন। ইম্ফল নদীর বাঁধ ৪টি জায়গায় ভেঙে গেছে।
সরকার ৩১টি ত্রাণ শিবির খুলেছে। সেনা ও উদ্ধার বাহিনী JNIMS মেডিকেল কলেজ থেকে শিক্ষার্থী ও স্টাফদের উদ্ধার করেছে।
অরুণাচল প্রদেশ: ২৩ জেলায় প্রভাব
মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০। ২৩টি জেলার ১৫৬টি গ্রামে ৯৩৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত।
পাপুম পারে, লোয়ার-আপার সুবনসিরি, দিবাং উপত্যকা সহ একাধিক জেলায় নদী উপচে পড়ছে। রাজ্যপাল কে টি পরনাইক জনগণকে সজাগ থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।
ত্রিপুরা: উন্নতির ইঙ্গিত
সোমবার বৃষ্টিপাত কমায় নদীগুলি বিপদসীমার নিচে নেমেছে। তবে এখনও ১০ হাজারের বেশি মানুষ ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন। রাজ্যজুড়ে ৬৬টি শিবিরে ২,৯২৬টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
মিজোরাম: ভূমিধসে অচল ২১২টি রাস্তা
ভারি বৃষ্টিতে মাটি ধসে রাজ্যের বহু রাস্তা বন্ধ। ৩ জন মায়ানমারী শরনার্থীসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যের সব স্কুল সোমবার বন্ধ ছিল এবং এর আগেও ২৯-৩০ মে তারিখে বন্ধ ছিল।
আরও আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন