নয়াদিল্লি, ৭ মে: পহেলগাঁওয়ের মর্মান্তিক হামলার ১৫ দিনের মাথায় প্রত্যাঘাত করল ভারত। রাতের অন্ধকারে, যখন দেশবাসীর অধিকাংশই ঘুমে আচ্ছন্ন, তখনই চালানো হল ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor)। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর বার্তা ছিল— “অপরাধীদের কোনও রেহাই নেই”। সেই বার্তারই বাস্তব রূপ হলো মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানে চালানো এয়ার এবং মিসাইল স্ট্রাইক।
অপারেশন সিঁদুরের লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র জঙ্গি ঘাঁটি
ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে— এই অভিযানে পাকিস্তানের কোনও বেসামরিক, সামরিক বা অর্থনৈতিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়নি। শুধুমাত্র সেইসব স্থানকে টার্গেট করা হয়েছে, যেগুলি জঙ্গিঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত।
পাক সেনার মুখপাত্র সাংবাদিক সম্মেলনে স্বীকার করেছে, ভারত ৬টি ভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে। মোট ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের, আহত হয়েছেন ৩৫ জন এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ২ জন।
পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু পাকিস্তানের
অভিযান চলাকালীনই পাকিস্তানের সেনা নিয়ন্ত্রণরেখা (LoC) বরাবর পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করে। বিশেষত পুঞ্চ অঞ্চল ছিল লক্ষ্য। এই গুলিতে একজন মহিলা ও তাঁর মেয়ে আহত হন। আরও দুঃখজনক খবর— পাক সেনার গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ জন ভারতীয় নাগরিক।
তিন ভারতীয়ের মৃত্যু— সেনার প্রতিক্রিয়া
ভারতীয় সেনা জানিয়েছে, এই হামলার সময় এবং পরবর্তী সময়কালে নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্তে ব্যাপক গুলি চালায় পাকিস্তান। তাতেই মৃত্যু হয়েছে ৩ জন নিরীহ ভারতীয়ের। সেনার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই গুলিবর্ষণেরও উপযুক্ত জবাব দেওয়া হয়েছে।

“IND”দেশের নেতাদের প্রতিক্রিয়া
- প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং টুইট করে লেখেন, “ভারত মাতার জয়”।
- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লেখেন: “নিরীহ ভাইদের মৃত্যুর বদলা নিল ভারতীয় সেনা। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর ওপর গর্বিত। ভারতের উপর হামলার যোগ্য জবাব দিয়েছে মোদী সরকার।”
- প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাতভর অভিযান পর্যবেক্ষণ করেন এবং সেনাবাহিনীকে পূর্ণ সমর্থন জানান।
- বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বহু রাজনৈতিক নেতাও ভারতীয় সেনাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
পটভূমি— পহেলগাঁও হামলা
২২ এপ্রিল, জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে এক মর্মান্তিক জঙ্গি হামলায় নিরীহ পর্যটকদের হত্যা করা হয়। অভিযোগ, ধর্মপরিচয় জেনে পুরুষ পর্যটকদের গুলি করে খুন করে জঙ্গিরা। বহু মহিলা স্বামীর নিথর দেহ জড়িয়ে উপত্যকায় বসে পড়েছিলেন। গোটা দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে এবং ‘বদলার’ দাবি জোরালো হয়।
অপারেশন সিঁদুর— একটি প্রতীকী জবাব
এই অভিযানের নাম— “অপারেশন সিঁদুর”— কেবল একটি সামরিক কৌশল নয়, বরং ভারতের প্রতিশোধের এক প্রতীক। সিঁদুর যে স্ত্রীর জন্য স্বামীর অস্তিত্বের চিহ্ন, সেই চিহ্ন যাঁরা মুছে দিয়েছে, তাদের রক্তেই লেখা হলো এই অভিযানের গল্প।
শেষ কথা:
পাকিস্তানের মাটিতে বসেই যারা ভারতের মাটি রক্তাক্ত করেছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে তাদেরই নির্মূল করল ভারতীয় সেনা। দেশ আজ গর্বিত। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই লড়াই চলবে— যতদিন না শেষ হয় শেষ জঙ্গি।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন