কলকাতা, ১৮ মে — বহু প্রতীক্ষিত ডিএ মামলায় অবশেষে সুপ্রিম কোর্টে বড় জয় পেলেন পশ্চিমবঙ্গের লক্ষাধিক রাজ্য সরকারি কর্মচারী। গত শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে অন্তত ২৫ শতাংশ বকেয়া মহার্ঘভাতা (DA) দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
এই মামলার শুনানিকে ঘিরে রাজ্যজুড়ে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ছিল। আদালতের তরফে জানানো হয়েছে, সমস্ত নীচু আদালতের রায় খতিয়ে দেখা হয়েছে এবং সর্বত্রই ডিএ কর্মীদের পক্ষে বলেই রায় এসেছে। সেই রায়কে সম্মান জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টও কর্মীদের পাশে দাঁড়াল।

রাজ্যের আপত্তি, আদালতের স্পষ্ট বার্তা
সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রবীণ আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি জানান, বর্তমানে রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে একবারে ৫০ শতাংশ বকেয়া ডিএ দেওয়া সম্ভব নয়। তখনই আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, রাজ্য সরকারকে অন্তত ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ দিতে হবে এবং তা আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর করতে হবে।
এছাড়া আদালত আরও নির্দেশ দেয়, চার সপ্তাহের মধ্যে মামলার সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষকে লিখিত বক্তব্য জমা দিতে হবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৪ অগাস্টে নির্ধারিত হয়েছে।
রাজ্য সরকারের চিন্তার ভাঁজ আরও গভীর
ডিএ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশে চাপ বেড়েছে রাজ্য সরকারের উপর। ইতিমধ্যেই সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিতে বিপুল ব্যয় হওয়ায় রাজ্য কোষাগারে সংকট স্পষ্ট। উদাহরণস্বরূপ, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে বরাদ্দ করা হয়েছে ২৬,৭০০ কোটি টাকা, যা গতবারের তুলনায় প্রায় ১২,০০০ কোটি টাকা বেশি। এর সঙ্গে এখন কর্মীদের বকেয়া ডিএ বাবদ আরও ১০,০০০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ যোগ হবে।
রাজ্যের কোষাগারের এই বাড়তি চাপ কীভাবে সামলাবে নবান্ন, তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, সরকারের হাতে সময় বেশি নেই, দ্রুত কোনও অর্থনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে।
ডিএ ফারাক এখনো বিশাল
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা ১৮ শতাংশ হারে ডিএ পাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণায় সম্প্রতি ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে তা ১৪ থেকে ১৮ শতাংশে উন্নীত হয়, যা কার্যকর হয় ১ এপ্রিল থেকে। তবে এখনও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের তুলনায় রাজ্যের ডিএ ফারাক ৩৭ শতাংশ। এই বিস্তর পার্থক্য ঘোচাতে এবং ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা।
উপসংহার
ডিএ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের এই রায় নিঃসন্দেহে কর্মচারীদের এক বড় জয়। তবে সেই রায় কার্যকর করতে রাজ্য সরকারকে আর্থিক দিক থেকে বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এখন দেখার বিষয়, নবান্ন এই সংকট সামাল দিতে কী কৌশল নেয়, আর ৪ অগাস্টের পর শুনানিতে কী মোড় নেয় এই মামলার ভবিষ্যৎ।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন