নিজস্ব সংবাদদাতা- চলতি বছর অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই জগন্নাথ মন্দিরকে কেন্দ্র করেই রথযাত্রার আগে এক অভিনব সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার রথযাত্রায় দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ পৌঁছে যাবে বাংলার ঘরে ঘরে। ইতিমধ্যেই প্রতিটি জেলায় স্থানীয় মিষ্টির দোকানগুলোতে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। বিশেষভাবে তৈরি করা হবে পেঁড়া ও গজা, যার মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হবে দিঘার মন্দির থেকে আসা খোয়া ক্ষীর।
এই প্রসাদ বিতরণের পরিকল্পনা মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরই শুরু হয়। ভক্তদের আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে এই উদ্যোগ। জানা গিয়েছে, সোমবার দিঘা জগন্নাথ মন্দিরে প্রায় ৩০০ কেজি খোয়া ক্ষীর অর্পণ করা হয় প্রভু জগন্নাথের চরণে। এই রাজভোগের পর সেই খোয়া পৌঁছে যাবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রতিটি জেলায় যাবে ১০ কেজি করে প্রসাদ, একটি বড় বাক্সে থাকবে ১০টি এক কেজির মুখবন্ধ প্যাকেট। তবে অতিরিক্ত গরমের মধ্যে এই প্রসাদ সংরক্ষণ নিয়েই উঠেছিল প্রশ্ন।
এই সমস্যা মোকাবিলায় রাজ্য সরকার নিয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। দুধ ও ক্ষীরজাতীয় খাদ্য দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখার জন্য ‘কোল্ড চেন’ ব্যবস্থার মাধ্যমে এই প্রসাদ সরবরাহ করা হবে। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে সড়কপথে এবং উত্তরবঙ্গে বিমানে এই খোয়া পৌঁছবে। প্রতিটি খোয়া প্যাকেট পাঠানোর আগে মন্দিরে পুজো করা হবে বলে জানান ইসকন কলকাতা শাখার সহ-সভাপতি রাধারমণ দাস।
উত্তরবঙ্গে সাতটি জেলার জন্য খোয়ার বাক্স মঙ্গলবার বিমানে করে শিলিগুড়ি পৌঁছবে এবং সেখান থেকে জেলার প্রতিনিধিরা তা গ্রহণ করবেন। দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুরসহ সাত জেলায় এই প্রসাদ পৌঁছে যাবে প্রশাসনিক ব্যবস্থায়। অন্যদিকে, দক্ষিণবঙ্গের ১২টি জেলা— দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম— এই সমস্ত জেলা কলকাতার রবীন্দ্র সদন চত্বর থেকে মঙ্গলবার প্রসাদ গ্রহণ করবে।
পরে এই খোয়া মিশিয়ে স্থানীয়ভাবে তৈরি হবে প্রসাদী মিষ্টি এবং ২৭ জুন রথযাত্রার আগেই রেশনের মতো বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবে সেই প্রসাদ ও দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের ছবি। তবে এই উদ্যোগ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এই প্রসাদের সঙ্গে দিঘার মন্দিরের কোনও সম্পর্ক নেই বলেই দাবি করেছেন। এরই জবাবে তৃণমূলের কুণাল ঘোষ পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, “এঁরা আদেও হিন্দু? লক্ষ লক্ষ মানুষের আবেগকে অসম্মান করছেন তাঁরা।”
রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে প্রশাসনিক দক্ষতার মেলবন্ধনে বাংলার ঘরে ঘরে এবার পৌঁছে যাবে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ।
আরও আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন