কলকাতা | মে ২০২৫
সব্যসাচী দত্ত ফের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে। কখনও মুখ্যমন্ত্রীর পাশে সহানুভূতির মঞ্চে, কখনও দলীয় কর্মসূচিতে আক্রমণাত্মক ভাষায়, আবার কখনও জনস্বার্থ মামলার বাদী হয়ে— নানা ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও বিধায়ককে। একাধিক ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক আলোচনায় উঠে এসেছে একটি প্রশ্ন: ফের বিধায়ক হওয়ার লক্ষ্যে কি সক্রিয় হয়েছেন সব্যসাচী?
মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা, আবার কড়া ভুমিকায়
সুতি হিংসা মামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একমঞ্চে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। আবার সল্টলেকে শিক্ষকদের বিক্ষোভে হুমকি দেওয়া এক তৃণমূল নেতার পরিচয়ে উঠে আসে তাঁর নামই। দিঘার মন্দির উদ্বোধন নিয়ে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের বিরুদ্ধে করা একটি মামলার বাদীও তিনিই। এই ধারাবাহিক উপস্থিতি রাজনীতির ময়দানে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে।
২০২৬-এর টার্গেট: রাজারহাট-নিউ টাউন?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সব্যসাচীর এই তৎপরতার পেছনে রয়েছে স্পষ্ট লক্ষ্য— ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফের রাজারহাট-নিউ টাউনের টিকিট নিশ্চিত করা। যদিও তিনি প্রকাশ্যে কিছু বলেননি, বরং সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাব দিয়েছেন কৌশলে:
“প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত দল ও নেত্রী নেবেন। আমি এ নিয়ে কিছু বলব না।”

অতীতের দোলাচল: তৃণমূল থেকে বিজেপি, ফের তৃণমূল
২০১৯ সালে তৃণমূলের হয়ে বিধানসভা এবং বিধাননগর পুরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও, সেই বছরই বিজেপিতে যোগ দেন সব্যসাচী। কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হওয়ার পর ফের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন করেন। তৃণমূল তখন তাঁকে বিধাননগর পুরভোটে প্রার্থী করে এবং তিনি জয়লাভ করে চেয়ারম্যান হন। যদিও মেয়র পদ আর ফিরে পাননি।
বর্তমান সমীকরণ: পথ কি মসৃণ?
২০২১ সালে সব্যসাচীর ছেড়ে যাওয়া রাজারহাট-নিউ টাউন আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হন তাপস চট্টোপাধ্যায়। প্রায় ৫৬,০০০ ভোটে জয় পান তিনি, এবং এখন দলীয় নেতৃত্বের সন্তুষ্টিও রয়েছে তাঁর কাজ নিয়ে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রত্যক্ষ সমর্থনে তাপসের উত্থান বলেই দলের অন্দরে বিশ্বাস।
অন্যদিকে, রাজারহাট-নিউ টাউনের ভেতরে এখন দুই গোষ্ঠীর মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন। একদিকে তাপস অনুগামীরা, অন্যদিকে সব্যসাচীর শিবির। মাঝে মধ্যেই উত্তেজনার খবর সামনে আসছে। ফলে তৃণমূলের অন্দরে চলছে ঠাণ্ডা লড়াই, যা পরবর্তী সময়ে বড় সংঘর্ষের রূপ নিতে পারে বলেই আশঙ্কা রাজনৈতিক মহলের।
মেয়র না বিধায়ক?
অনেকেই বলছেন, বিধাননগরের মেয়র পদে ফের প্রত্যাবর্তনও সব্যসাচীর লক্ষ্য হতে পারে। তবে বর্তমানে মমতার আস্থা কৃষ্ণা চক্রবর্তীর উপরেই। কৃষ্ণা নিজে অনিচ্ছুক না হলে পরবর্তী পুরভোটেও তিনিই দলের মুখ হবেন বলেই সম্ভাবনা। তাই সব্যসাচীর কাছে বিধায়ক হওয়াটাই আপাতত সবচেয়ে সম্ভাব্য লক্ষ্য।
উপসংহার:
সব্যসাচী দত্ত আবার আলোচনার কেন্দ্রে। তাঁর রাজনৈতিক কৌশল ও কর্মকাণ্ড এখনই দলের নজরে। কিন্তু রাজারহাট-নিউ টাউনের আসনে টিকিট পাওয়ার লড়াইয়ে তাঁকে যেমন মুখ্যমন্ত্রীর আস্থা অর্জন করতে হবে, তেমনি সন্তুষ্ট রাখতে হবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।
দুই পক্ষের ‘সমান সমঝোতা’ ছাড়া তার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন সম্ভব হবে কি? সময়ই দেবে উত্তর।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন