নিজস্ব সংবাদদাতা -অন্ধকার কাটিয়ে অবশেষে সূর্যোদয় হল রামধনুর দেশে। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের জন্য বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি জিতে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেইসঙ্গে বহুদিনের অভিশাপ ঘুচিয়ে ‘চোকার্স’ তকমা মুছে ফেলে এক নতুন ইতিহাস রচনা করল প্রোটিয়ারা। ১৯৯৮ সালে আইসিসি নকআউট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রফি খরা যেন এক যন্ত্রণার নাম হয়ে উঠেছিল। কখনও সেমিফাইনালে, কখনও ফাইনালের ঠিক আগে, কখনও বা দুর্ভাগ্যজনিত কারণে তাদের স্বপ্নভঙ্গ ঘটেছে। চোখের জলে ফিরতে হয়েছে প্রতিবার। বিশেষ করে গত বছরের ২৯ জুন ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনালে হেরে যাওয়া স্মৃতি আজও টাটকা। সেই হারের ঠিক ৩৫০ দিন পর, একই দিন গণনায়, এসেছে বহু কাঙ্ক্ষিত মুক্তি। দক্ষিণ আফ্রিকার নামের পাশে এবার লেখা থাকবে—বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন।
এই জয় যে শুধু ম্যাচজয় নয়, সেটা বোঝা যাচ্ছিল শুরু থেকেই। টেস্টের তৃতীয় দিনেই ম্যাচের মোড় দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে ঘুরে গিয়েছিল। জয়ের জন্য চতুর্থ দিনে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৬৯ রান, হাতে ৮ উইকেট। ক্রিজে ছিলেন এডেন মার্করাম এবং তেম্বা বাভুমা। কিন্তু ইতিহাস যেহেতু সাক্ষ্য দেয়, দক্ষিণ আফ্রিকার সাফল্যের পথে বারবার বাধা এসেছে, তাই সকলেই আশঙ্কা করছিলেন—আবার কি ফসকে যাবে সুযোগ?
চতুর্থ দিনের শুরুতেই সেই ভয়টা যেন সত্যি হয়ে উঠতে চাইছিল। মাত্র ১৮ বলের মাথায় আউট হয়ে যান অধিনায়ক বাভুমা। তাঁর সঙ্গে মার্করামের গড়া ১৪৭ রানের জুটি ভেঙে যায়। সারা দলের ভরসার জায়গাটি খানিকটা নড়বড়ে হয়ে পড়ে। প্রশ্ন উঠতে থাকে—তবে কি আবার?
তবে এইবার গল্পটা আলাদা ছিল। মার্করাম ছিলেন একাগ্র, দৃঢ় এবং আগ্রাসী। অধিনায়কের বিদায়ের পর দলকে সোজা গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন তিনি। চাপের মুখেও তাঁর ব্যাটে ছিল ধারাবাহিকতা, জোর, আর আত্মবিশ্বাস। একের পর এক রান তুলে, প্রতিপক্ষ বোলারদের চাপে রাখেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১৩৬ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলে ম্যাচের ভিত মজবুত করে দেন।
মার্করামের আউটের সময় দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল মাত্র ৬ রান। আর সেই কাজটা শেষ করেন কাইল ভেরেইন ও ডেভিড বেডিংহ্যাম। স্টার্কের বল ব্যাটে লাগিয়ে কভার পয়েন্টে বল পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই উল্লাসে ফেটে পড়ে লর্ডস। যেন গোটা বিশ্ব অপেক্ষা করছিল এই মুহূর্তটির জন্য—অবশ্যই অস্ট্রেলিয়া বাদে।
প্রোটিয়াদের জয় মানে শুধু একটা ট্রফি নয়, এটা এক দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান, ভাঙা হৃদয়ের পুনর্গঠন, আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার গল্প। বহুবার ভেঙে পড়ে ফের উঠে দাঁড়ানোর নামই দক্ষিণ আফ্রিকা। আজ তাঁরা প্রমাণ করল—আলো আসেই, অন্ধকার যত গভীরই হোক না কেন।
আরও আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন