কলকাতা, ১৪ মে — বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের (Bengal Global Business Summit) মঞ্চে যেসব বিনিয়োগ প্রস্তাবের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছিল, সেগুলি এবার বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই বিনিয়োগকারীদের জমা দেওয়া প্রস্তাব খতিয়ে দেখে শিল্পায়নের জন্য ২,৫১৫ একর জমি বরাদ্দ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ₹২৫,০০০ কোটি, যার মাধ্যমে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে কাজ মিলবে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের।
রাজ্য মন্ত্রিসভার বুধবারের বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য দ্রুত শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এই লক্ষ্যে আমরা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি।” মূলত পুরুলিয়া, দুর্গাপুর, পানাগড়-সহ ১০টি অঞ্চলে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের জমি এই শিল্প প্রকল্পগুলির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
ইস্পাত শিল্পে বড় বিনিয়োগ, এমএসএমইর জন্য আলাদা উদ্যোগ
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আসা বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলির বেশিরভাগই ইস্পাত শিল্প সংক্রান্ত। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (MSME) ক্ষেত্রেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের ১৫টি শিল্পতালুকে ৪৩টি সংস্থাকে জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা এই খাতে কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত খুলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতিটি জেলায় শপিং মল, থাকবে সিনেমা হল ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টল
শিল্পায়নের পাশাপাশি বিনোদন এবং ক্ষুদ্র উদ্যোগকেও গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী পূর্বেই টলিউডের একাধিক তারকার প্রস্তাবের ভিত্তিতে জানিয়েছিলেন, প্রতিটি জেলায় পিপিপি (PPP) মডেলে শপিং মল তৈরি হবে। সেই ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার ১১টি জেলার জন্য এই প্রকল্পে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। পুরুলিয়া, দার্জিলিং, হাওড়া, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়ার মতো জেলা এই তালিকায় রয়েছে। প্রতিটি মলে সিনেমা হল ছাড়াও কমপক্ষে দুটি তলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টলের জন্য বরাদ্দ থাকবে।
উত্তরবঙ্গ সফর ও সিনার্জি কমিটির কার্যক্রম
আগামী সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন। সোমবার শিলিগুড়িতে বণিকমহলের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে ঘোষিত ‘সিনার্জি কমিটি’র কাজ নিয়েই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যার লক্ষ্য বিনিয়োগে প্রশাসনিক জট কমানো।
মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির ওদলাবাড়িতে সরকারি পরিষেবা প্রদান কর্মসূচি এবং বুধবার উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। সেখানে উত্তরবঙ্গের সব জেলার প্রশাসনিক ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। বৃহস্পতিবার তিনি শিলিগুড়ি থেকে কলকাতায় ফিরবেন।
উপসংহার
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয় মেয়াদে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তার বাস্তব রূপ দেখা যাচ্ছে এবার। বিপুল বিনিয়োগ, জমি বরাদ্দ, শপিং মল নির্মাণ এবং প্রশাসনিক উদ্যোগ রাজ্যের অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করতে পারে বলেই মনে করছে শিল্পমহল।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন
