নিজস্ব সংবাদদাতা-ট্রেনে শেষ মুহূর্তে কোথাও যেতে চাইলে ভরসা একমাত্র তৎকাল টিকিট। কিন্তু সেই ভরসাতেই এখন ভর করেছে সন্দেহ। দেশের হাজার হাজার যাত্রীর অভিযোগ, বুকিং খোলার সঙ্গে সঙ্গেই তৎকাল টিকিট ‘সোল্ড আউট’ দেখাচ্ছে। কেউ বলছেন সার্ভার ডাউন, কেউ বলছেন সিস্টেম ল্যাগ করছে। আর এই অসুবিধার মধ্যেই উঠে আসছে প্রশ্ন— তৎকাল টিকিট বুকিংয়ে কি কোনও কারচুপি চলছে?
তৎকাল টিকিট বুকিং কখন হয়?
তৎকাল টিকিট বুকিং হয় যাত্রার আগের দিন।
- এসি কোচের জন্য সকাল ১০টা থেকে
- নন-এসি কোচের জন্য সকাল ১১টা থেকে
এই সময় ভারতীয় রেলের IRCTC পোর্টাল বা অ্যাপ খোলে। কিন্তু অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, ঠিক এই সময়েই শুরু হয়ে যাচ্ছে বিভ্রাট। কেউ ঢুকতেই পারছেন না, কেউ শেষ ধাপে গিয়েও টিকিট বুক করতে পারছেন না। মাত্র ১-২ মিনিটের মধ্যে সব টিকিট সোল্ড আউট হয়ে যাচ্ছে, যা অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য।
যাত্রীরা কী বলছেন?
লোকাল সার্কেল নামে একটি সংস্থা সম্প্রতি এক সমীক্ষা চালায়। ২০২৫ সালের এপ্রিল-মে মাসে ৫৫,০০০ যাত্রীর উপর করা সেই সমীক্ষায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
- প্রায় ৭০% যাত্রী জানিয়েছেন, তৎকাল বুকিং করতে গিয়ে তারা অসুবিধায় পড়েছেন
- ২৯% যাত্রীর দাবি, তারা কখনওই তৎকাল টিকিট পাননি
- ৩ জনের মধ্যে ১ জন মনে করছেন, এজেন্ট ছাড়া তৎকাল টিকিট পাওয়া সম্ভব নয়
অনেকেই অভিযোগ করেছেন, একাধিকবার চেষ্টা সত্ত্বেও কনফার্ম টিকিট পাওয়া যায় না। ওয়েটিং লিস্টেই থেকে যায়। অথচ কিছু এজেন্টের হাতে নির্ভুলভাবে কনফার্ম টিকিট পৌঁছে যাচ্ছে— এই ঘটনায় সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে অবিশ্বাস।
কোথায় সমস্যা?
তৎকাল বুকিংয়ের সময় সাধারণ যাত্রীরা যেসব সমস্যায় পড়েন:
- পোর্টালে ঢুকেই সার্ভার ডাউন দেখায়
- CAPTCHA লোড হতে দেরি হয়
- পেমেন্ট গেটওয়েতে গিয়ে আটকে যায়
- টাকা কেটে নেওয়া হয়, কিন্তু টিকিট কনফার্ম হয় না
- এক মিনিটের মধ্যে সব টিকিট সোল্ড আউট হয়ে যায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ যাত্রীদের টাইমিং, নেট স্পিড, কম্পিউটার কনফিগারেশন— সবকিছুতেই দেরি হয়। অন্যদিকে কিছু স্ক্রিপ্ট ব্যবহারকারী পেশাদার এজেন্ট মুহূর্তেই বুকিং করে ফেলেন, যেটা সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব।
কি পুরোনো ইতিহাস জানায়?
২০১৫-১৬ সালে ভারতীয় রেল নিজেই একটি তদন্ত করেছিল। সেখানে উঠে আসে একাধিক রেলের কর্মী এবং কিছু অসাধু এজেন্ট মিলে নকল তৎকাল বুকিং চক্র চালাচ্ছে। তারা ভুয়ো নামে আগেভাগেই তৎকাল টিকিট বুক করত এবং পরে টিকিট পরিবর্তন করে তা আসল যাত্রীর নামে করে দিত। এই পুরো প্রক্রিয়া এতটাই নিখুঁতভাবে চলত যে তা চট করে ধরা সম্ভব ছিল না।
তাহলে সমাধান কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, রেলের উচিত:
- আধুনিক এবং দ্রুততর সার্ভার চালু করা
- CAPTCHA-ভিত্তিক নিরাপত্তা আরও শক্ত করা
- এজেন্ট বুকিংয়ের উপর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করা
- AI ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে বট স্ক্রিপ্ট বা সন্দেহজনক বুকিং চিহ্নিত করা
- সাধারণ যাত্রীর জন্য ‘ফেয়ার বুকিং প্রোটোকল’ চালু করা
আরও আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন