পুরুলিয়া
নিজস্ব সংবাদদাতা – পুরুলিয়ার জলের ইতিহাস ১৮৩৮ সালেই শুরু, যখন কর্নেল টিকল সাহেব বাঁধ খননের উদ্যোগ নেন। কিন্তু প্রায় দুই শতক পেরিয়েও জেলাবাসীর তৃষ্ণা আজও মেটেনি। প্রশাসনের পরিকল্পনা বদলেছে, রাজনৈতিক ব্যানার পাল্টেছে, কিন্তু পানীয় জলের সংকট এক ঐতিহ্য হয়ে রয়ে গেছে এই জনপদে।
রাজ্য সরকার বারবার দাবি করেছে, গ্রামীণ জলের সমস্যা মেটাতে সোলার পাম্প, চেকড্যাম, পুকুর খনন থেকে শুরু করে জলের ট্যাঙ্ক পাঠানো পর্যন্ত নানাবিধ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে—চেকড্যামে জল নেই, টিউবওয়েল শুকিয়ে গিয়েছে, সোলার পাম্প অকেজো। মানুষের পিপাসা মেটে না, বরং বেড়ে চলে হতাশা।
বিজেপির দাবি, একমাত্র কেন্দ্রীয় ‘জলজীবন মিশন’ প্রকল্পেই রয়েছে স্থায়ী সমাধান। কিন্তু এই প্রকল্পেও একাধিক অভিযোগ। কল বসানো হলেও জল আসে না, ফলে প্রশ্ন—এটা বাস্তব উন্নয়ন, না নিছক রাজনৈতিক প্রদর্শন?
২০২৬ সালের ভোটের আগে প্রকল্প শেষ করার কথা থাকলেও ২০২৩-এ কেন্দ্রীয় অনুদান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই পরিকল্পনায় ছেদ পড়ে। রাজ্য সরকার সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৮ পর্যন্ত নিয়ে গেলেও, ততদিনে রাজনীতির জল কতদূর গড়াবে—সেই প্রশ্ন উঠছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত লোকসভা বা পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের দুর্বলতার পিছনে অন্যতম কারণ ছিল এই জলের সমস্যা। এমনকি ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও এই ক্ষত রয়ে গিয়েছে। এখন রাজ্য সরকারের ‘জাইকা’ প্রকল্পকে ঘিরে আবার নতুন আশার বীজ বপন করা হচ্ছে—তবে জনগণের প্রশ্ন, নতুন নাম আর পুরনো প্রতিশ্রুতি দিয়ে কতটা জল পাওয়া যাবে?
পুরুলিয়া যেন এক দীর্ঘকালীন ‘তৃষ্ণার্ত প্রতীক্ষা’র নাম, যেখানে ইতিহাসের সাহেব বাঁধও আজ পরিত্রাতা নয়, আর প্রশাসনের ‘জলস্বপ্ন’-ও যেন এখনও শুধুই স্বপ্ন।
আরও আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন