১০ মে ২০২৫,কলকাতা:ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে দেশের বিমানবন্দরগুলিতে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ জারি করেছে কেন্দ্রের বিমান পরিবহণ মন্ত্রক। তারই অংশ হিসেবে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও। নিরাপত্তা ব্যবস্থা মজবুত করতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রবেশপথে গাড়ি দাঁড়াতে না দেওয়া, যাত্রীদের অতিরিক্ত স্ক্রিনিং এবং CISF কর্মীদের ছুটি বাতিল।
বিমানবন্দরের প্রবেশপথে কড়াকড়ি, CISF-এর ছুটি বাতিল
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে অ্যারাইভাল এবং ডিপারচার উভয় গেটেই বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। যাত্রী ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গাড়ি দাঁড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কলকাতা বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় শিল্প সুরক্ষা বাহিনীর (CISF) সব সদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এমনকি আগেই যারা ছুটি নিয়েছিলেন, তাঁদেরও কাজে ফিরতে বলা হয়েছে।

উড়ানের আগেই বাড়তি স্ক্রিনিং, যাত্রীদের ৩ ঘণ্টা আগে আসার পরামর্শ
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রচলিত চেকিং ছাড়াও যাত্রীদের উড়ানে ওঠার ঠিক আগে অতিরিক্ত এক দফা নিরাপত্তা পরীক্ষা করা হবে। ফ্লাইট মিসের ঝুঁকি এড়াতে যাত্রীদের অন্তত তিন ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, প্রত্যেক যাত্রীকে উড়ান সংস্থার পক্ষ থেকে প্রদত্ত ট্র্যাভেল গাইডলাইন কঠোরভাবে মেনে চলার কথা বলা হয়েছে।
আকাশসীমা এড়িয়ে ঘুরপথে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট, বাড়ছে খরচ ও সময়
বর্তমানে পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে প্রায় সব আন্তর্জাতিক উড়ান পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপে যাতায়াত করছে। একইভাবে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের আকাশসীমাতেও জারি রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এর ফলে কলকাতা থেকে ছাড়া বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট নাগপুর, মুম্বই হয়ে আরব সাগরের উপর দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছচ্ছে। এই ঘুরপথে যাওয়ার কারণে উড়ানের সময় যেমন বেড়েছে, তেমনই জ্বালানির খরচও অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
চাপ বাড়ছে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে, রুট বদল এয়ার ইন্ডিয়ার
পূর্ব এশিয়া থেকে আগত একাধিক ফ্লাইট এখন কলকাতা হয়ে নাগপুর পথে যাতায়াত করছে। ফলে কলকাতা বিমানবন্দর ও তার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ইউনিটের উপর কাজের চাপ বহুগুণে বেড়েছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় এয়ার ইন্ডিয়া তাদের পাইলট ও বিমানকর্মীদের ডিউটি সময় পুনর্বিন্যাসের অনুমতির জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছে।
২৭টি বিমানবন্দর বন্ধ, ১৫ মে পর্যন্ত চলবে নিষেধাজ্ঞা
কেন্দ্রীয় নির্দেশ অনুসারে, উত্তর, পশ্চিম ও মধ্য ভারতের মোট ২৭টি বিমানবন্দর আগামী ১৫ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ওই অঞ্চলের আকাশসীমাও অসামরিক বিমানের জন্য পুরোপুরি বন্ধ। ফলে প্রতিদিন গড়ে ৪০০-র বেশি উড়ান বাতিল হচ্ছে। কলকাতা থেকেও দৈনিক ১০ থেকে ১২টি ফ্লাইট বাতিলের খবর মিলেছে।
নোটাম জারি ও ক্ষতির আশঙ্কা
দেশজুড়ে ২০টির বেশি বিমানবন্দরে জারি হয়েছে ‘নোটিশ টু এয়ার মেন’ বা নোটাম। যার ফলে ওই সমস্ত এলাকায় বিমান চলাচলে বিশেষ সতর্কতা মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিমান পরিবহণ মন্ত্রক দেশের সব বিমানবন্দরের অধিকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে।
এই নিষেধাজ্ঞা ও রুট পরিবর্তনের কারণে বিমান সংস্থাগুলির আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কয়েকশো কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, মাস কয়েক আগেও একাধিক বিমানবন্দরে পরপর বোমাতঙ্কের ঘটনায় সংস্থাগুলি বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়েছিল।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন