বীরভূমে তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক: অনুব্রতের উপস্থিতি, মমতার ফোন, ও দলের নতুন রূপরেখা

Spread the love

বীরভূম, ১৮ মে:দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে জেলা সভাপতি পদ হারানোর পর একদিনের ব্যবধানে রবিবার বীরভূমে অনুষ্ঠিত হল তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। বৈঠকে ছিলেন সদ্য পদচ্যুত অনুব্রত মণ্ডলও। বৈঠক চলাকালীন তাঁকে ফোন করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ফোনালাপ ও বৈঠক ঘিরে ফের চাঞ্চল্য রাজনৈতিক মহলে।

নিয়মিত কোর কমিটির বৈঠক

দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে মাসে দু’বার কোর কমিটির বৈঠক হবে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশমতো এই নিয়ম চালু করা হচ্ছে। ১৪ জুন সিউড়িতে ও ২৮ জুন বোলপুরে পরবর্তী দুটি বৈঠক হবে বলে জানানো হয়েছে।

অনুব্রতের উপস্থিতি ও মমতার বার্তা

যদিও বৈঠকে অনুব্রতের অংশগ্রহণ নিয়ে আগে জল্পনা ছিল, তিনি ঠিক সময়মতো উপস্থিত হন। বৈঠকের মাঝেই মমতা তাঁকে ফোন করেন। দলীয় সূত্রের দাবি, ফোনে মমতা তাঁকে ঠান্ডা মাথায় কাজ করার পরামর্শ দেন এবং বলেন, চাইলে অনুব্রত কোর কমিটির বৈঠক ডাকতেই পারেন। তবে কেষ্ট (অনুব্রতের ডাকনাম) উত্তরে জানান, এখন থেকে বৈঠক ডাকবেন জেলার চেয়ারপার্সন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ই।

কর্মসূচি নিয়ে দ্বন্দ্ব

সম্প্রতি বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডল নিজে থেকে তিনটি মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন—২৪ মে রামপুরহাট, ২৫ মে বোলপুর ও ২৬ মে সিউড়ি। এ নিয়ে কোর কমিটির অনুমোদন না থাকার অভিযোগ ওঠে। রবিবারের বৈঠকে সেই কর্মসূচিতে অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর মমতার ফোনে এ বিষয়ে তাঁকেও জানানো হয়। মমতা শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেন—যে কোনও ভবিষ্যৎ কর্মসূচি আগে কোর কমিটিতে আলোচনা ও অনুমোদনের পরেই বাস্তবায়িত হবে।

দলের ভেতরের বিভাজন?

বিগত কয়েক মাস ধরে কোর কমিটির বৈঠক না হওয়ায় দলের অন্দরে ক্ষোভ জমেছিল। বিশেষত কাজল শেখ প্রকাশ্যে অনুব্রত-বিরোধী মন্তব্য করায় সেই বিভাজন প্রকাশ্যে আসে। তবে বৈঠকের পর আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কাজল শেখ—উভয়েই জানান, এখন আর কোনও বিভেদ নেই, সকলেই একসঙ্গে কাজ করবেন।

উপস্থিতি ও অনুপস্থিতি

রবিবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অনুব্রত, আশিস, কাজল শেখ, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী ও তৃণমূল নেতা সুদীপ্ত ঘোষ। অনুপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ ও বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়। আশিস জানিয়েছেন, শতাব্দী দিল্লিতে ও চন্দ্রনাথ অন্য এক বৈঠকের কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি।

নির্বাচনের রূপরেখা

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বীরভূম জেলায় তৃণমূল পরিচালনা করবে কোর কমিটি। সমাজমাধ্যমে বিভেদমূলক প্রচারে কড়া আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন আশিস। কাজল শেখের কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশই চূড়ান্ত। সেই নির্দেশ মেনেই আমরা বীরভূমের প্রতিটি আসনে জিতব।”

উপসংহার:
বীরভূমে অনুব্রত-যুগের পরবর্তী অধ্যায়ে কোর কমিটিই হতে চলেছে মূল চালিকা শক্তি। মমতার হস্তক্ষেপে দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব আপাতত সামাল দেওয়া গেলেও, পরবর্তী পদক্ষেপেই স্পষ্ট হবে—দল আদতে কতটা ঐক্যবদ্ধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্বধারা – সত্যের সন্ধানে, আপনার সাথে


বিশ্বধারা - সত্যের সন্ধানে অবিচল,

আপনার বিশ্বস্ত সঙ্গী। পশ্চিমবঙ্গ ও বাইরের নিরপেক্ষ সংবাদে আমরা নিবেদিত। স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতাই আমাদের মূল ভিত্তি। আমাদের সাথে থাকুন, সঠিক তথ্য জানুন।

This will close in 11 seconds