ট্রাম্প প্রশাসনের সাময়িক শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা – বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত

Spread the love

৩০ মে ২০২৫, ওয়াশিংটন:
ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অনেক বিদেশী পণ্যের উপর অস্থায়ীভাবে ১৫% পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের (WSJ) বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রশাসন এমন একটি আইন ব্যবহার করতে পারে যা ১৫০ দিনের জন্য এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি দেয়। যদিও এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি, বিষয়টির সাথে ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলি WSJ-কে জানিয়েছে যে এই পরিকল্পনা নিয়ে সক্রিয়ভাবে আলোচনা চলছে।

পরিকল্পনা ‘বি’: আদালতের রায় বদলাতে বিকল্প উদ্যোগ

এই পদক্ষেপ আসে এমন এক সময়ে, যখন বাণিজ্য আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের আগে নেওয়া কিছু পদক্ষেপকে বাতিল করে দেয় এবং রায় দেয় যে ট্রাম্প তার আইনি কর্তৃত্ব লঙ্ঘন করেছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন “পরিকল্পনা বি” হিসেবে একটি বিকল্প পথ খুঁজছে।

WSJ জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন ১৯৭৪ সালের বাণিজ্য আইনের একটি আগে কখনো ব্যবহার না হওয়া ধারা ব্যবহার করতে পারে, যার অধীনে ১৫০ দিনের জন্য ১৫% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা সম্ভব। প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় এই স্টপগ্যাপ ব্যবস্থাটি “ন্যাশনাল সিকিউরিটি” বা জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তির ওপর ভিত্তি করে আরও বিস্তৃতভাবে প্রয়োগের বিষয়টি বিবেচিত হচ্ছে।

শুল্ক আরোপে আইনি জটিলতা ও আপিলের প্রস্তুতি

বুধবার নিউইয়র্ক-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের একটি প্যানেল রায় দেয় যে রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের একক সিদ্ধান্তে শুল্ক পরিবর্তনের ক্ষমতা নেই। তারা বলেন, “শুল্ক কর্তৃত্বের সীমাহীন অর্পণ সরকারের অন্য শাখার কাছে আইন প্রণয়নের ক্ষমতার অনুপযুক্ত ত্যাগ।”

ট্রাম্প প্রশাসন তাদের পদক্ষেপ ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ১৯৭৭ সালের আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (IEEPA) এর উল্লেখ করলেও আদালত স্পষ্ট করে জানায়, কংগ্রেস কখনোই এই আইনের অধীনে রাষ্ট্রপতিকে শুল্ক বৃদ্ধির সীমাহীন ক্ষমতা দেয়নি।

তবে, ফেডারেল সার্কিটের আপিল আদালত এদিন একটি নতুন রায়ে পূর্বের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে জানায়, শুল্ক আরোপ বন্ধ করা “জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ” হতে পারে। এই আপাত বিজয় ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য সাময়িক স্বস্তি বয়ে এনেছে।

বিকল্প আইন: স্মুট-হাওলি আইন এবং পিটার নাভারোর মন্তব্য

বাণিজ্য ও উৎপাদন বিষয়ক সিনিয়র কাউন্সেলর পিটার নাভারো ব্লুমবার্গ টিভিতে মন্তব্য করেছেন যে প্রশাসন ১৯৩০ সালের স্মুট-হাওলি ট্যারিফ আইন ব্যবহার করতে পারে, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার সাথে বৈষম্যমূলক আচরণকারী দেশগুলোর ওপর ট্যারিফ আরোপ করতে পারবে।

ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট

এই সাময়িক শুল্ক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মেক্সিকোর মতো বড় বাণিজ্য অংশীদারদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। এই পদক্ষেপ ট্রাম্প প্রশাসনের আমেরিকা-প্রথম নীতির প্রতিফলন হলেও, এটি মার্কিন ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন।

এখন দেখার বিষয়, আদালতের ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত এবং প্রশাসনের বিকল্প আইনি উদ্যোগ কীভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি গঠনে প্রভাব ফেলে। বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এটি হতে পারে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়।

আরও আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্বধারা – সত্যের সন্ধানে, আপনার সাথে


বিশ্বধারা - সত্যের সন্ধানে অবিচল,

আপনার বিশ্বস্ত সঙ্গী। পশ্চিমবঙ্গ ও বাইরের নিরপেক্ষ সংবাদে আমরা নিবেদিত। স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতাই আমাদের মূল ভিত্তি। আমাদের সাথে থাকুন, সঠিক তথ্য জানুন।

This will close in 11 seconds