নতুন নিয়মে বিতর্ক আমেরিকা-ভারত দুই দেশেই
ওয়াশিংটন: দক্ষ বিদেশি কর্মী নিয়োগে এবার আরও বড় বোঝা চাপালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এইচ-১বি ভিসার জন্য মার্কিন সংস্থাগুলিকে এককালীন এক লক্ষ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮৮ লক্ষ টাকা) সরকারের হাতে জমা দিতে হবে। শুক্রবার ট্রাম্প স্বাক্ষর করার পর থেকেই আমেরিকা জুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
হোয়াইট হাউসের দাবি, বিদেশ থেকে কর্মী আনার বদলে স্থানীয় আমেরিকানদেরই প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলুক সংস্থাগুলি। এতে আমেরিকার চাকরি থাকবে আমেরিকানদের হাতেই। একইসঙ্গে, বাইরে থেকে যাঁদের আনা হবে তাঁরা সত্যিই দক্ষ কি না—এই বাড়তি ফি তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে বলেই মনে করছে প্রশাসন। তবে সমালোচকদের আশঙ্কা, এই এক লক্ষ ডলারের বোঝা শেষ পর্যন্ত কর্মীদের ঘাড়েই চাপাবে সংস্থাগুলি।
এইচ-১বি ভিসা কী?
এইচ-১বি হলো একটি অ-অভিবাসী ভিসা, যার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের দক্ষ পেশাজীবীরা সাময়িক সময়ের জন্য আমেরিকায় কাজ করার সুযোগ পান। ১৯৯০ সালে চালু হওয়া এই ভিসায় বিদেশি কর্মীরা মার্কিন নাগরিকদের সমান বেতন পান। প্রাথমিক মেয়াদ তিন বছর, যা সর্বোচ্চ ছয় বছর পর্যন্ত বাড়ানো যায়। এ সময়ের মধ্যে গ্রিন কার্ডের জন্যও আবেদন করা সম্ভব।
কারা আবেদন করতে পারেন?
ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি থাকলেই আবেদন করা যায়। বিশেষ করে বিজ্ঞান, গণিত, তথ্যপ্রযুক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে এই ভিসার চাহিদা বেশি।
খরচ কত ছিল, কত হলো?
এখন পর্যন্ত তিন বছরের জন্য এই ভিসার খরচ ছিল ১,৭০০–৪,৫০০ মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় দেড় থেকে প্রায় চার লক্ষ টাকা)। ট্রাম্পের নতুন নির্দেশ অনুযায়ী এককালীন এক লক্ষ ডলার ফি সংযোজন হলে এক ধাক্কায় খরচ বেড়ে যাবে প্রায় ৮৮ গুণ।
ভারতের জন্য বড় ধাক্কা
প্রতি বছর এই ভিসার সর্বাধিক সুবিধা পান ভারতীয়রা। শুধু গত বছরেই ৭১ শতাংশ আবেদন অনুমোদিত হয়েছে ভারত থেকে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চিন (১১.৭ শতাংশ)। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে অ্যামাজ়ন ১২ হাজার, মাইক্রোসফট ও মেটা পাঁচ হাজার করে ভিসা আবেদন অনুমোদন করেছে। নয়াদিল্লি ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, এই পদক্ষেপে বহু ভারতীয়র জীবনে পারিবারিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। ভারত সরকার আশা করছে, ট্রাম্প প্রশাসন এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করবে।
বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন
আমেরিকার আইনজীবী মহলের একাংশের মতে, প্রেসিডেন্টের একক সিদ্ধান্তে এইচ-১বি ভিসায় এক লক্ষ ডলার চাপানো আইনসম্মত নয়। ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের এক সিনিয়র আধিকারিক জানিয়েছেন, “প্রক্রিয়াকরণের খরচ সামান্য বাড়ানো যেতে পারে, কিন্তু এককালীন এত বড় অঙ্ক চাপানোর ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নেই।” অনেকেই মনে করছেন, এ নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা হতে পারে। তবে অপর একাংশের মতে, ট্রাম্পের নির্দেশ বৈধ। ফলে বিষয়টি নিয়ে জোরদার আইনি লড়াই চলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।