নয়াদিল্লি:ভারতে অ্যাপলের পণ্য উৎপাদন বন্ধ করার সুপারিশ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার কাতারের রাজধানী দোহায় এক সম্মেলনে নিজেই এই মন্তব্য করেন তিনি। ট্রাম্প জানান, তিনি সম্প্রতি অ্যাপল সিইও টিম কুকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং স্পষ্টভাবেই বলেন, “আমি চাই না আপনি ভারতে পণ্য উৎপাদন করুন।”ট্রাম্পের এই মন্তব্য ঘিরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মহলে শুরু হয়েছে চাঞ্চল্য। কারণ, বর্তমানে আইফোন, আইপ্যাড, ম্যাকবুক এবং ইয়ারপড-সহ একাধিক অ্যাপল পণ্য ভারতে তৈরি হচ্ছে, যার ফলে ভারতীয় প্রযুক্তি শিল্পে একটি নতুন দিগন্ত তৈরি হয়েছে।
ভারতের উপর ট্রাম্পের সরাসরি মন্তব্য
ট্রাম্প বলেন, “আমি টিম কুককে জানিয়েছি—আপনি যদি ভারতের দায়িত্ব নিতে চান, তা হলে সেখানে উৎপাদন করুন। কারণ ভারত বিশ্বের অন্যতম উচ্চ শুল্ক গ্রহণকারী দেশ, ফলে ভারতে পণ্য বিক্রি করা কঠিন।” তাঁর মতে, ভারত নিজের বাজার নিজের মতো করে সামলাতে পারবে এবং দেশটি নিজেই ভালভাবে চলছে।
ট্রাম্প এ-ও দাবি করেন, ভারত আমেরিকাকে নিঃশুল্ক বাণিজ্যচুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল, যদিও সেই চুক্তি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তিনি বলেন, “আমরা চিনে উৎপাদন সহ্য করেছি বছরের পর বছর। কিন্তু ভারত? সেখানে নতুন কারখানা তৈরি হোক—এটা আমরা চাই না।”
অ্যাপলের ওপর প্রভাব কী হতে পারে?
বর্তমানে অ্যাপল তাদের পণ্যের একটি বড় অংশ চিনে তৈরি করলেও, সাম্প্রতিক বছরে তারা ভারতের দিকে ঝুঁকেছে। স্ট্র্যাটেজির অংশ হিসেবে কুক ঘোষণা করেছিলেন যে, ২০২৫ সালের মধ্যেই মার্কিন বাজারের জন্য প্রায় অর্ধেক আইফোন ভারতেই তৈরি হবে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের মন্তব্য অ্যাপলের ভবিষ্যত নীতিতে বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে উৎপাদন বন্ধ হলে অ্যাপলের পণ্যের দাম বাড়বে এবং ভারতীয় গ্রাহকদের কাছে তা আরও দুর্লভ হয়ে উঠতে পারে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন টানাপড়েন?
ট্রাম্পের মন্তব্য শুধুমাত্র অ্যাপল বা প্রযুক্তি জগৎ নয়, ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কেও বড়সড় বার্তা দিচ্ছে। এর আগেও ২০১৯ সালে ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের উপর উচ্চ হারে শুল্ক বসানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন এবং আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্যের উপর ২৬% শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন।
যদিও পরে চিন বাদে অন্যান্য দেশের ওপর শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়। সেই সময় থেকে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে একাধিকবার বাণিজ্য আলোচনা হয়েছে। তবে এই নতুন মন্তব্য সেই আলোচনার ভবিষ্যৎকেও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
ট্রাম্পের বক্তব্য এখনও পর্যন্ত ভারত সরকার সরকারি ভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে কূটনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে, ট্রাম্পের এই মন্তব্য কি কেবলই ‘বাণিজ্য চাপ’ প্রয়োগ করার কৌশল, নাকি এর পেছনে রয়েছে বৃহত্তর কৌশলগত উদ্দেশ্য?
সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে ট্রাম্পের একাধিক মন্তব্যেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁর হস্তক্ষেপেই দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয়েছিল। যদিও ভারত এই দাবি সরাসরি খারিজ করে দেয়।
উপসংহার
ট্রাম্পের এই মন্তব্য আপাতভাবে অ্যাপল সংক্রান্ত হলেও, আসলে এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জটিল সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি। ভারতের মতো একটি উদীয়মান বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ও উৎপাদনের উপর এমন মন্তব্য শুধু প্রযুক্তি শিল্প নয়, রাজনৈতিক পরিসরেও ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে টিম কুক ও অ্যাপলের পদক্ষেপ এবং ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়ার দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন