ইউক্রেনের FPV ড্রোন হামলায় রাশিয়ার ৪১টি বোমারু বিমান ধ্বংস: কী এই ড্রোন, কেন এত বিপজ্জনক?

FPV
Spread the love

নিজস্ব সংবাদদাতা-সাড়ে তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নতুন এক মোড় নিল। রবিবার ইউক্রেনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা রাশিয়ার অভ্যন্তরে ঢুকে পাঁচটি বিমানঘাঁটিতে দাঁড়িয়ে থাকা ৪১টি বোমারু বিমান ধ্বংস করেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয়, এই হামলা কোনো ক্ষেপণাস্ত্র নয়, বরং অত্যাধুনিক FPV (First Person View) আত্মঘাতী ড্রোনের মাধ্যমে চালানো হয়েছে। যদিও রাশিয়া এখনও এই দাবি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, ইউক্রেনের সামরিক সূত্রে জানানো হয়েছে, ১ জুন তাদের FPV ড্রোন বহর রাশিয়ার বিভিন্ন কৌশলগত বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়।

কী এই FPV ড্রোন?

FPV বা ফার্স্ট পার্সন ভিউ ড্রোন হলো একটি ছোট আকারের, স্বল্প খরচে তৈরি ড্রোন যেটির সামনের দিকে একটি ক্যামেরা বসানো থাকে। এই ক্যামেরা ‘রিয়েল টাইম’ ছবি পাঠায় অপারেটরের কাছে। অর্থাৎ ড্রোন যে জায়গায় উড়ে বেড়াচ্ছে, তার লাইভ ভিডিও দেখে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অপারেটর ঠিক যেন নিজে সেই ড্রোনের ভিতর থেকে সব কিছু দেখছেন, এমন একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা পান। অনেকটা ভিডিও গেম খেলার অভিজ্ঞতার মতো, তবে বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে।

কীভাবে কাজ করে এই ড্রোন?

এই ড্রোন মূলত আত্মঘাতী হামলার জন্য তৈরি। এর কাজ তিন ধাপে হয়— প্রথমে ড্রোনটি উড়ে নির্দিষ্ট এলাকায় পৌঁছে যায়। দ্বিতীয় ধাপে এটি টার্গেট শনাক্ত করে, যেমন যুদ্ধবিমান, ট্যাঙ্ক বা ভবন। তৃতীয় ধাপে এটি সোজাসুজি সেই লক্ষ্যবস্তুর দিকে ছুটে গিয়ে আঘাত হানে এবং বিস্ফোরণ ঘটায়। সাধারণত এই ড্রোনে গ্রেনেড বা IED (Improvised Explosive Device) লাগানো থাকে, যা লক্ষ্যবস্তুর গায়ে আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরিত হয়।

ইউক্রেন কীভাবে ব্যবহার করল?

সূত্রের দাবি অনুযায়ী, ইউক্রেন স্বল্প খরচে নিজস্বভাবে এই ড্রোনগুলো তৈরি করেছে। ভারতীয় মুদ্রায় এক একটি FPV ড্রোনের দাম মাত্র ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকার মধ্যে পড়ে। থ্রিডি প্রিন্টার, ছোট মোটর, ক্যামেরা এবং ব্যাটারি ব্যবহার করে ইউক্রেন এই ড্রোন তৈরি করছে। ১ জুনের হামলায় শত শত FPV ড্রোন একযোগে পাঠানো হয়েছিল রাশিয়ার পাঁচটি বিমানঘাঁটিতে। ওই ঘাঁটিগুলির নাম— এঞ্জেলস এয়ারবেস, শেকোভকা, মোজ়দোক, ইঙ্গোশেতিয়া সামরিক অঞ্চল এবং ওরেল এয়ারফিল্ড।

এই ঘাঁটিগুলিতে রাখা ছিল রাশিয়ার টিইউ-৯৫ এবং টিইউ-২২এম৩ বোমারু বিমান, যেগুলোর মাধ্যমে মস্কো ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছিল। এই বিমানগুলিকে নিশানা করেই হামলা চালানো হয়, এবং ইউক্রেন দাবি করেছে, তারা ৪১টি বিমান ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।

কেন এই ড্রোন এত বিপজ্জনক?

FPV ড্রোন আকারে ছোট হওয়ায় এগুলোকে রাডার সিস্টেম সহজে ধরতে পারে না। ফলে রাশিয়ার মতো শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও এগুলিকে আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়াও এই ড্রোন অত্যন্ত সাশ্রয়ী— একেকটি ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় হাজার গুণ সস্তা হলেও, কার্যকারিতার দিক থেকে অনেক বেশি মারাত্মক হতে পারে। FPV ড্রোনের মাধ্যমে টার্গেটে একেবারে সোজাসুজি, নিয়ন্ত্রিত আঘাত হানা যায়। একে বলা হয় ‘precision strike’। এই আঘাতে শত্রুপক্ষের বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, এমনকি কয়েক কোটি ডলারের যুদ্ধবিমানও এক নিমেষে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনের এই পদক্ষেপ আধুনিক যুদ্ধের পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। স্বল্প খরচে এত বড় ক্ষয়ক্ষতি ঘটানো সম্ভব— এটি ভবিষ্যতের যুদ্ধনীতির রূপরেখা পাল্টে দিতে পারে। পাশাপাশি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাও স্পষ্ট হয়েছে। এই হামলা ইউক্রেনের প্রযুক্তিগত দক্ষতার এক বড় প্রমাণ।

আরও আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্বধারা – সত্যের সন্ধানে, আপনার সাথে


বিশ্বধারা - সত্যের সন্ধানে অবিচল,

আপনার বিশ্বস্ত সঙ্গী। পশ্চিমবঙ্গ ও বাইরের নিরপেক্ষ সংবাদে আমরা নিবেদিত। স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতাই আমাদের মূল ভিত্তি। আমাদের সাথে থাকুন, সঠিক তথ্য জানুন।

This will close in 11 seconds