আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ‘বড় সুন্দর বিল’: নয়া কর কাঠামোয় বিপাকে ভারতীয় অনাবাসীরা

Spread the love

নয়াদিল্লি, ১৯ মে — মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থিত বিতর্কিত ‘বড় সুন্দর বিল’ (One Big Beautiful Bill) বাস্তবায়নের পথে আরও একধাপ এগোলো। রবিবার রাতে মার্কিন হাউস বাজেট কমিটি এই বিলের পক্ষে ভোট দেওয়ায় বিলটি কংগ্রেসে আস্থাভোটের জন্য প্রস্তুত। এই বিল আইনে পরিণত হলে সবথেকে বড় প্রভাব পড়তে চলেছে আমেরিকায় বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ ভারতীয় এবং অনাবাসী ভারতীয়দের উপর।

বিলের মূল বিষয়বস্তু কী?
বিলটির দৈর্ঘ্য ১,১১৬ পৃষ্ঠা। মূলত কর কাঠামোয় বড় রদবদলের প্রস্তাব রয়েছে এতে। বিশেষ করে যাঁরা মার্কিন নাগরিক নন কিন্তু কর্ম বা ব্যবসার কারণে আমেরিকায় বসবাস করছেন, তাঁরা সরাসরি এই নতুন করের আওতায় পড়বেন। প্রস্তাব অনুযায়ী, আমেরিকায় আয় করা অর্থ যদি কেউ নিজের দেশে পাঠাতে চান, তবে সেই রেমিট্যান্সের উপর পাঁচ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, করের কোনও ন্যূনতম সীমা নির্ধারিত হয়নি। অর্থাৎ ১ ডলার হোক কিংবা ১০,০০০— যেকোনও অঙ্কের টাকা পাঠালেই কর দিতে হবে। তবে মার্কিন নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই কর প্রযোজ্য হবে না।

ভারতীয়দের উপর প্রভাব কতটা ভয়াবহ?
আমেরিকায় বর্তমানে বসবাসকারী প্রায় ৪৫ লক্ষ ভারতীয় এই বিল কার্যকর হলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৩২ লক্ষ ভারতীয় বংশোদ্ভূত। এইচ-১বি ভিসাধারী কর্মী থেকে শুরু করে গ্রিনকার্ডধারী ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের ওপর এই করের প্রভাব পড়বে। শুধু ব্যক্তিগত রেমিট্যান্স নয়, বিনিয়োগ, শেয়ার বাজারে আয় ইত্যাদির উপরও কর বসানো হবে বলে বিলে প্রস্তাব রয়েছে।

ভারতের জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা হতে পারে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) হিসেব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে বিদেশ থেকে প্রেরিত মোট ১১,৮৭০ কোটি ডলারের মধ্যে ২৮ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৩,২০০ কোটি ডলার এসেছে শুধুমাত্র আমেরিকা থেকে। এই অর্থ মূলত প্রবাসী ভারতীয়দের পরিবারের কাছে পাঠানো হয়েছিল।

বিল নিয়ে বিভাজন, ট্রাম্পের দলের মধ্যেই মতভেদ
ট্রাম্প বারবার এই বিলের পক্ষে সওয়াল করলেও, তাঁর নিজ দলের মধ্যেই মতভেদ তৈরি হয়েছে। গত শুক্রবার কংগ্রেসে প্রাথমিক ভোটাভুটিতে পাঁচজন রিপাবলিকান সদস্য ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে একজোট হয়ে বিলের বিপক্ষে ভোট দেন। ফলে বিলটি আইনে পরিণত হওয়া এখনও অনিশ্চিত।

তবে হাউস বাজেট কমিটির সমর্থন ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য কিছুটা স্বস্তির। এখন অপেক্ষা আস্থাভোটের, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে বিলটি খারিজ হয়ে যেতে পারে।

শেষ কথা
‘বড় সুন্দর বিল’ নামটি যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, এর বাস্তবায়ন প্রবাসী ভারতীয়দের জন্য কোনওভাবেই ‘সুন্দর’ নয়। আইনে পরিণত হলে এটি কেবল রেমিট্যান্স খাতে ব্যয়বৃদ্ধিই নয়, প্রবাসীদের আমেরিকায় থাকার সিদ্ধান্তকেও প্রভাবিত করতে পারে। এখন দেখার বিষয়, কংগ্রেসে বিলটি আসল পরীক্ষায় কতটা টিকে থাকতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্বধারা – সত্যের সন্ধানে, আপনার সাথে


বিশ্বধারা - সত্যের সন্ধানে অবিচল,

আপনার বিশ্বস্ত সঙ্গী। পশ্চিমবঙ্গ ও বাইরের নিরপেক্ষ সংবাদে আমরা নিবেদিত। স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতাই আমাদের মূল ভিত্তি। আমাদের সাথে থাকুন, সঠিক তথ্য জানুন।

This will close in 11 seconds