দীর্ঘ নয় বছর পর প্রকাশ্যে এলেন পলাতক শিল্পপতি বিজয় মালিয়া। একসময়ের রাজকীয় জীবনযাত্রা, বিলাসবহুল পার্টি, এবং কোটি কোটি টাকার ব্যবসার সঙ্গে পরিচিত এই নাম, এখন চিহ্নিত একজন বিতর্কিত আর্থিক প্রতারক হিসেবে। তবে মালিয়ার দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে যে ‘চোর’ তকমা লাগানো হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
রাজ সামানির পডকাস্ট শো-তে উপস্থিত হয়ে বিজয় মালিয়া সরাসরি জনগণের কাছে ক্ষমা চান কিংফিশার এয়ারলাইন্সের ব্যর্থতার জন্য। তাঁর মতে, সংস্থার ভেঙে পড়া, কর্মীদের বেকার হয়ে যাওয়া—এই সমস্ত কিছুর জন্য তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তবে একই সঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, তিনি কোনও চুরি বা প্রতারণা করেননি। বরং সংবাদমাধ্যমের দোষারোপেই তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।
মালিয়া বলেন, “৯ বছর ধরে সংবাদমাধ্যম আমাকে নিয়ে ভুয়ো খবর ছড়িয়েছে। রঙ চড়িয়ে, অতিরঞ্জন করে মানুষের মধ্যে ঘৃণা তৈরি করা হয়েছে। চোর বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে আমাকে। অথচ কোথায় চুরি হয়েছে তা আজও কেউ দেখাতে পারেনি।”
তাঁর বক্তব্য, “যখন কিংফিশার ডুবে যায়, তখন ৪৯৯৯ কোটি টাকার ঋণ ছিল। সুদসহ ৬২০৩ কোটি টাকা বাকি ছিল। অথচ সরকার আমার কাছ থেকে ১৪,১০০ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে। এখন আমার পাল্টা প্রশ্ন করা উচিত নয় কি? এত টাকা যদি ফেরত পাওয়া গেছে, তাহলে চুরির প্রশ্নটাই ওঠে না।”
তিনি মানছেন, ভারত ছেড়ে যাওয়ার পর তাঁকে ‘পলাতক’ বলা হয়েছে, এবং সে বিষয়টি তিনি মেনে নিচ্ছেন। তবে ‘চোর’ তকমা তিনি মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, “আমি পালিয়ে যাইনি। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে পূর্বনির্ধারিত সফরের জন্য ভারতের বাইরে যাই। তারপর কিছু বৈধ কারণে আর দেশে ফেরার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে কেউ যদি নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চয়তা দেয়, আমি দেশে ফিরতে রাজি।”
ভারতের একাধিক ব্যাঙ্ক থেকে কিংফিশার এয়ারলাইন্সের নামে নেওয়া ঋণ এবং পরবর্তী ঋণখেলাপির ঘটনায় বিজয় মালিয়ার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি নানা মামলা রুজু করেছে। ব্রিটেনের আদালত ২০১৮ সালে তাঁর প্রত্যর্পণের অনুমতি দিলেও মালিয়া ভারতে ফেরেননি। তাঁর মতে, দেশে ফিরলে নিরপেক্ষ বিচার পাবেন না তিনি।
একসময় দেশের কর্পোরেট দুনিয়ার হাই-প্রোফাইল মুখ বিজয় মালিয়া আবারও সংবাদের শিরোনামে উঠে এলেন নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে। তিনি ক্ষমা চাইলেন, কিন্তু তাঁর মতে, তাঁকে ‘চোর’ বলার মধ্যে শুধু সংবাদমাধ্যম নয়, রাজনৈতিক স্বার্থও জড়িয়ে রয়েছে। এখন দেখার, এই বক্তব্যের পর ভারতের আইন ও রাজনৈতিক মহলে কী প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
আরও আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন