কলকাতা,১৫ মে:চাকরি বাতিল কাণ্ডে (SSC Recruitment Case) ফের উত্তপ্ত রাজ্য প্রশাসনিক সদর বিকাশ ভবন চত্বর! পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ, ১৫ মে, বৃহস্পতিবার, ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর নেতৃত্বে চাকরিচ্যুত প্রার্থীরা বিকাশ ভবন ঘেরাও অভিযানে নামে। তাঁদের সাত দফা দাবিকে সামনে রেখে শুরু হয় এই বিক্ষোভ কর্মসূচি, যা মুহূর্তেই রূপ নেয় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে।
গেটে তালা, ভাঙচুর, আটকে পড়লেন শতাধিক কর্মী
প্রতিবাদকারীদের তৎপরতায় বিকাশ ভবনের লোহার গেটে নতুন তালা লাগিয়ে দেয় চাকরিচ্যুতরা, ফলে ভিতরে আটকে পড়েন শতাধিক দপ্তরকর্মী। গেট ভাঙচুর ও ধস্তাধস্তির জেরে ঘটনাস্থল কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপুর ১২টা নাগাদ বিক্ষোভকারীদের চাপে বিকাশ ভবনের গেট কার্যত ভেঙে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের ব্যাপক চেষ্টা সত্ত্বেও সল্টলেক করুণাময়ী চত্বরে ছড়িয়ে পড়ে চরম উত্তেজনা।

সব্যসাচী দত্তের গাড়ি আটকাল চাকরিপ্রার্থীরা
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্ত। তবে তাঁকেও প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়। বিক্ষোভকারীরা তাঁর গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন, যার ফলে তিনি কোনওরকমে সেই জটলা থেকে বেরিয়ে আসেন।
পরে সংবাদমাধ্যমে তিনি জানান—
“আমি ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম। এটা বিক্ষোভকারীদের আবেগ। তবে আদালতের নির্দেশ আদালতই দেখছে, আমাদের সবার তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত।”
চাকরি ফেরতের দাবি, রিপ্যানেল ও রিভিউয়ের প্রশ্ন
চাকরি বাতিল হওয়া প্রার্থীরা আজ স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন—
“আমরা বার বার একই চাকরির জন্য পরীক্ষা দিতে পারব না। সরকারকে স্বতন্ত্র ক্ষমতা প্রয়োগ করে আমাদের চাকরি ফেরাতে হবে।”
আন্দোলনের অন্যতম মুখ মেহেবুব মণ্ডল বলেন—
“এতদিন স্বাধীনভাবে আন্দোলন করেছি। এবার আমাদের সসম্মানে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। যারা দুর্নীতি করেছে, তাদেরই আবার পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে— এটা গ্রহণযোগ্য নয়।”
অনেকেই রিপ্যানেল গঠনের দাবি তোলেন, যাতে নতুন করে মেধা তালিকা তৈরি করে তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া যায়।
প্রতিবাদে পথনাটিকা
আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ শহরের বিভিন্ন জায়গায় পথনাটিকার আয়োজন করা হয়েছে।
- যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
- বিকেল ৪টা নাগাদ যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডের সামনে
এর আগেও চাকরি বাতিলের প্রতিবাদে ২১ থেকে ২৪ এপ্রিল এসএসসি ভবনের সামনে অবস্থান করেন চাকরিহারারা। এরপর ৭ মে থেকে বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলন শুরু হয়, যা আজ চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে।
আন্দোলনের মূল সাত দফা দাবি (সংক্ষেপে):
- বাতিল হওয়া চাকরি পুনর্বহাল
- রিপ্যানেল গঠন
- রিভিউ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা
- নতুন করে পরীক্ষা না নেওয়ার আবেদন
- আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার
- বঞ্চিতদের পুনরায় নিয়োগ
- রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে সমস্যার সমাধান
উপসংহার
যত দিন যাচ্ছে, ততই তীব্র হচ্ছে চাকরিচ্যুত প্রার্থীদের ক্ষোভ। সরকারি নীরবতা, আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা এবং প্রশাসনিক উদাসীনতা মিলে এই আন্দোলন এখন রাজ্য রাজনীতির কেন্দ্রে। সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ না করে, তবে সামনে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন