কলকাতা | ৩০ মে ২০২৫:
WBCS পরীক্ষায় বাংলা ভাষার বাধ্যতামূলক পেপার বাতিল করে সেখানে হিন্দি ও উর্দুকে অন্তর্ভুক্ত করায় রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদে সরব হয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন ‘বাংলা পক্ষ’। তাদের দাবি, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাজ্য সরকার বাঙালিদের সঙ্গে সরাসরি “বেইমানি” করেছে।
পেছনে ফিরে দেখা: ৩০০ নম্বরের বাংলা বাধ্যতামূলক ছিল
২০২৩ সালের ১৫ মার্চ রাজ্য সরকার একটি গেজেট নোটিফিকেশন জারি করে জানায়, WBCS পরীক্ষায় বাংলা ভাষাকে বাধ্যতামূলক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পরীক্ষার মোট নম্বরের মধ্যে ৩০০ নম্বর বরাদ্দ ছিল বাংলা ভাষা পেপারের জন্য। পাহাড় অঞ্চলের প্রার্থীদের জন্য তখন নেপালি ভাষার বিকল্প দেওয়া হয়েছিল।
এই সিদ্ধান্তে বাংলা পক্ষের আন্দোলনের জয় বলে মনে করা হচ্ছিল। রাজ্যজুড়ে বাঙালিরা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু এবার হঠাৎ করে সেই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনায় বিরক্তি ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন মহলে।
‘বাংলা পক্ষ’-এর তীব্র প্রতিক্রিয়া: হিন্দি-উর্দু ঢুকিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা
বাংলা পক্ষের সাধারণ সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায় সম্প্রতি এক ফেসবুক লাইভে বলেন,
“WBCS-এ বাংলা বাধ্যতামূলক পেপার বাতিল করে হিন্দি ও উর্দুকে ঢোকানো মানে বাঙালির সঙ্গে চরম বেইমানি। এটা বিজেপির ইচ্ছেপূরণ করতে গিয়ে তৃণমূলের আত্মসমর্পণ।”
তিনি আরও দাবি করেন,
“তৃণমূল সরকার এখন বহিরাগত তোষণে লিপ্ত। বাঙালিদের স্বার্থ রক্ষা নয়, বরং উত্তর ভারতীয় রাজনীতিকে খুশি করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

মিডিয়ার ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ
সেই লাইভ ভিডিওতে গর্গ চট্টোপাধ্যায় দেশের শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলিকেও আক্রমণ করেন। তিনি বলেন,
“এবিপি, রিপাবলিক-সহ বেশ কিছু জাতীয় চ্যানেল যারা রাতদিন বিজেপির সমালোচনা করে, তারাও এই ইস্যুতে চুপ। ফলে বাঙালিকেই এখন নিজেদের ভাষা ও পরিচয়ের লড়াই লড়তে হবে।”
তিনি আরও হুঁশিয়ারি দেন,
“WBCS-এ বাংলা বাধ্যতামূলক না করলে ভোট নয়— এই স্লোগান নিয়ে পথে নামবে বাংলা পক্ষ।”
অন্যান্য রাজ্যের উদাহরণ টেনে তুলোধোনা
বাংলা পক্ষের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে,
ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্যে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সেই রাজ্যের আঞ্চলিক ভাষা বাধ্যতামূলক। যেমন—
A. বিহারে হিন্দি
B.গুজরাটে গুজরাটি
C. মহারাষ্ট্রে মারাঠি
D. কর্ণাটকে কন্নড়
E. উড়িষ্যায় ওড়িয়া
F. কেরালায় মালায়ালম
G. তামিলনাড়ুতে তামিল
এমন পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই বাংলা ভাষাকে সরিয়ে অন্য ভাষার ঢোকানো নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, বিশেষ করে যখন এটি একটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের পরীক্ষা নয়, বরং রাজ্যের নিজস্ব প্রশাসনিক ক্যাডারের জন্য।
উপসংহার: বাংলা ভাষার মর্যাদা নিয়ে ফের জোরালো বিতর্ক
WBCS পরীক্ষায় বাংলা ভাষার বাধ্যতামূলকতা তুলে দেওয়া এবং পরিবর্তে হিন্দি-উর্দুর প্রবেশকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে এক নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ‘বাংলা পক্ষ’-এর প্রতিবাদ এই বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে।
অনেকেই মনে করছেন, এই ইস্যু রাজ্যের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও ভাষাগত আন্দোলনে বড় ভূমিকা নিতে পারে।
আরও আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন