কলকাতা | ৩১ মে,২০২৫:
অ্যান্ড্রয়েড হোক বা আইফোন—পুরনো মডেলের একাধিক স্মার্টফোনে আজ, রবিবার থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ পরিষেবা। ‘মেটা’র মালিকানাধীন এই জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপটি মে মাসেই এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেও, ভারতের ক্ষেত্রে তা কার্যকর হল জুন মাস থেকে। সংস্থার বক্তব্য, ব্যবহারকারীদের তথ্যের গোপনীয়তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
একসময় কেবল উচ্চবিত্ত ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও, গত পাঁচ-ছয় বছরে বিশেষ করে কোভিড পরবর্তী সময়ে হোয়াটসঅ্যাপ হয়ে উঠেছে প্রতিটি ঘরের অ্যাপ। নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত, এমনকি প্রবীণরাও এখন এটি দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে ফেলেছেন। ফলে, এই পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে সমাজের সেই অংশের ওপর, যারা এখনও পুরনো মডেলের ফোন ব্যবহার করেন।
বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপে শুধু বার্তা আদান-প্রদানই নয়, আর্থিক লেনদেন, ব্যবসায়িক কার্যকলাপ, সরকারি বার্তা এবং স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করার কাজও চলে। এমন অবস্থায়, অ্যাপটির নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য বারবার আপডেট, বাগ ফিক্স এবং নতুন ফিচার যোগ করাই সংস্থার দায়িত্ব। উদাহরণস্বরূপ, এখন আর হোয়াটসঅ্যাপ প্রোফাইল ছবি কেউ ডাউনলোড করতে পারে না, কারণ অতীতে তা ব্যবহার করে বহু প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেলিংয়ের ঘটনা ঘটেছে।

তবে এই আপডেটের ফলে পুরনো মডেলের ডিভাইসগুলি হোয়াটসঅ্যাপের এই আধুনিক ফিচারগুলি চালাতে পারছে না। বিশেষ করে চ্যানেল, বিজনেস অ্যাকাউন্ট, কমিউনিটিজের মতো ফিচারগুলির জন্য প্রয়োজন উন্নত হ্যান্ডসেট ও অপারেটিং সিস্টেম। ফলে, পুরনো অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস সংস্করণ চলা ফোনগুলিকে বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
ভারতে বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮৫ কোটিরও বেশি, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। তারপরে রয়েছে ব্রাজিল (১৪ কোটি) ও ইন্দোনেশিয়া (১১ কোটি)। ভারতের প্রবীণ প্রজন্ম হোক বা আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা যুবসমাজ—অনেকেই এখনও পুরনো স্মার্টফোনেই নির্ভরশীল। তাঁদের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ হয়ে যাওয়া মানেই একপ্রকার সামাজিক এবং আর্থিক বিচ্ছিন্নতা।
সরকারি প্রকল্পের তথ্য, হাসপাতালের রিপোর্ট কিংবা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ—সবই এখন অনেকের জন্য হোয়াটসঅ্যাপে নির্ভরশীল। ফলে বাধ্য হয়েই নতুন, আপডেটযোগ্য স্মার্টফোন কিনতে হবে। আর তাতেই ন্যূনতম ১০ হাজার টাকার ধাক্কা খেতে হবে তাঁদের। যদিও হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, যদি ফোনটি অ্যান্ড্রয়েড ৫.১ বা আইওএস ১৫.১ সংস্করণ পর্যন্ত আপগ্রেড করা যায়, তাহলে পরিষেবা ব্যবহার করা যাবে।
তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—ভারতের মতো একটি বৈচিত্র্যময় আর্থ-সামাজিক দেশে, প্রযুক্তিগত উন্নতির দোহাই দিয়ে কতটা সুবিচার হল সমাজের পিছিয়ে থাকা অংশটির প্রতি? প্রযুক্তির এই উত্তরণে পিছিয়ে পড়ল না তো আরও একবার সাধারণ মানুষ?
আরও আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন