কলকাতা | ১৯ মে, ২০২৫
ট্র্যাভেল ভ্লগিংয়ের আড়ালে আরও বড় ষড়যন্ত্র! হরিয়ানার ইউটিউবার জ্যোতিরানি মালহোত্রাকে শুধুমাত্র বিচ্ছিন্ন তথ্য পাচারকারীর চরিত্রে নয়, বরং পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর সরাসরি ‘অ্যাসেট’ হিসেবে গড়ে তোলার পেছনে সক্রিয় ভূমিকা ছিল—এমনই বিস্ফোরক দাবি করেছেন হরিয়ানার হিসার জেলার পুলিশ সুপার শশাঙ্ককুমার সাওয়ান।
শনিবার হিসার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জ্যোতিকে। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা, পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি, সন্দেহভাজন বিদেশি সংস্থার সঙ্গে গোপন যোগাযোগ—এই সব অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ জানায়, ‘অপারেশন সিন্দুর’ চলাকালীন এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনার সময়েও জ্যোতি পাকিস্তান হাই কমিশনের এক কর্মীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখেছিলেন। এমনকি ওই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় যুদ্ধবিরোধী পোস্ট করে ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের’ অংশ হিসেবেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।
জ্যোতির পাকিস্তান সংযোগ: কীভাবে ফাঁস হল?
তদন্তে উঠে এসেছে, জ্যোতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলেই রেখে দিয়েছিলেন ‘প্রমাণ’। ২০২৪ সালে দিল্লিতে পাকিস্তান হাই কমিশনে আয়োজিত একটি ইফতার পার্টিতে অংশ নেন তিনি। ওই পার্টির ভিডিও নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোডও করেন, যেখানে স্পষ্ট দেখা যায়, তিনি দূতাবাসের কর্মী এহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কথা বলছেন। দানিশ আবার নিজের স্ত্রীকে জ্যোতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। গোয়েন্দারা মনে করছেন, এই দানিশের হাত ধরেই পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির পথচলা শুরু হয় জ্যোতির।

সন্দেহ প্রকাশের সূচনা: সোশ্যাল মিডিয়ায় সতর্কবার্তা
এই ঘটনায় প্রথম সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন কপিল জৈন নামের এক ব্যক্তি। তিনি ১০ মে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে এনআইএ-কে ট্যাগ করে জানান, “এই মহিলার গতিবিধি নজরে রাখা দরকার। তিনি প্রথমে পাকিস্তান দূতাবাসে যান, তারপর ১০ দিনের জন্য পাকিস্তান সফরে যান, বর্তমানে কাশ্মীরে যাচ্ছেন। এসবের মধ্যে নিশ্চয় কোনও যোগসূত্র আছে।”
চীন সংযোগ ও আর্থিক তদন্ত
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জ্যোতি শুধু পাকিস্তানই নয়, অতীতে চীনেও গিয়েছিলেন। সেই সফরের উদ্দেশ্য কী ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি তার আর্থিক লেনদেন, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, বিভিন্ন অনলাইন মানি ট্রান্সফার অ্যাপ ব্যবহার ইত্যাদি সব কিছুই তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। পুলিশ সুপার জানান, “আমরা জানতে চাইছি, কীভাবে একজন সাধারণ ইউটিউবার এত ঘন ঘন বিদেশ সফর করতে পারতেন? তাঁর আয় ও ব্যয়ের মধ্যে কোনও অসামঞ্জস্য আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ল্যাপটপ ও গ্যাজেট ফরেনসিক স্ক্যানে
জ্যোতির ব্যবহৃত ল্যাপটপ, মোবাইল, ক্যামেরা ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সূত্রের দাবি, এতে আরও অনেক গোপন তথ্য উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, জ্যোতি ভারতের মধ্যে একাধিক অবাঞ্ছিত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন এবং অন্যান্য ইউটিউবারদের সঙ্গেও ‘বন্ধুত্ব’ বাড়িয়ে তুলছিলেন—যা আইএসআইয়ের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ বলেই সন্দেহ।
‘ডিজিটাল প্রপাগান্ডা’ যুদ্ধের আশঙ্কা
পুলিশ সুপার বলেন, “এটা এক ধরনের যুদ্ধ, যেখানে শত্রুপক্ষ ডিজিটাল মিডিয়াকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। ইউটিউবার, ইনফ্লুয়েন্সার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মাধ্যমে ভারতের নিরাপত্তা ও ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।”
শেষ কথা
এই ঘটনায় সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে, বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমভিত্তিক কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের প্রতি। ভ্লগিং ও ইনফ্লুয়েন্সিংয়ের নামে কেউ যেন দেশের গোপন তথ্য শত্রুর হাতে তুলে না দেয়, তা নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসন ও সাধারণ নাগরিক—উভয়কেই।
এনআইএ ইতিমধ্যে তদন্তে নেমেছে। সব মিলিয়ে, এই ইউটিউবার কাণ্ডের পরিণতি যে শুধুই জ্যোতির গ্রেপ্তারে শেষ হচ্ছে না, তা এখন স্পষ্ট। তদন্তের গভীরে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছে গোয়েন্দা মহল।
নিয়মিত বাংলা সংবাদের আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন